রফিকুল ইসলাম সাগর : কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া থেকে : স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে বিদেশ এসে আমি এখন প্রবাসী। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরে বর্তমানে আমার অবস্থান। কি নেই এই শহরে? সব আছে, অনেক উন্নত দেশ, উন্নত শহর। বলা যায় স্বপ্নের শহরও, নেই শুধু কারও জন্য কারও সময়। নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত সবাই। এই দেশের রাস্তাতে নেই ধুলাবালি, যানজট নেই, ট্রাফিক পুলিশ সব সময় থাকে না, সবাই সিগনাল বাতি মেনে চলাচল করে। নেই লোডশেডিং সমস্যা। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই উন্নত। সিটির মধ্যে দুই ধরনের ট্রেন মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করে একটি, আরেকটি মাটির উপর দিয়ে। অসংখ্য সরকারি বাস। বেশিরভাগ যাত্রী ট্রেন দিয়ে চলাচল করে। ট্রেনের টিকিট কাটার ব্যবস্থাও খুব উন্নত। আজ থেকে ২০ বছর আগে নাকি মালয়েশিয়ায় এসব কিছুই ছিল না। ছিল শুধু পাহাড় আর জঙ্গল।
মাত্র বিশ বছরে এত উন্নত! ভাবতে অবাক লাগে ! সবচেয়ে অবাক লাগে এ পর্যন্ত এদেশের গাড়িগুলোতে হর্ন দিতে দেখিনি। বুঝতে পারলাম এখানে মানুষ শব্দদূষণ সম্পর্কে অনেক সচেতন। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ খুব ভালো। এত বড় এই দেশের জনসংখ্যা নাকি মাত্র তিন কোটি। এখানে নিজের কাজ নিজেকে করতে হয়, নিজের গাড়ি সবাই নিজে ড্রাইভ করে ড্রাইভার রেখে কেউ টাকা নষ্ট করে না। শিক্ষক নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে এয়ারপোর্ট-এ ছাত্রকে রিসিভ করতে আসে। এ দেশের মেয়েরা খুব পরিশ্রমী। তারা ঘরে বসে থাকে না, কাজ করে। কিন্তু তারা রান্না করতে পারে না। বেশিরভাগ মানুষ রেস্টুরেন্টে খাবার খায়। প্রচুর শাকসবজি খায় আর কোন কিছুই পুরোপুরি রান্না করে না, হালকা কাঁচা রেখে খায়। তাই সবাই খুব স্বাস্থ্যবান। রেস্টুরেন্টগুলোর খাবার একেবারে নির্ভেজাল, অর্ডার করার পর রান্না করা হয় এবং তা খেতে দেয়া হয়।
সবাই বলত বিদেশের জীবন নাকি খুব কষ্টের। কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না। কষ্ট লাগে যখন কথা বলার জন্য কাউকে পাই না, এখানে সব থাকলেও আমার আপন মানুষগুলো নেই, বন্ধুবান্ধবরা নেই। খুব মনে পড়ছে আমার মাতৃভূমির কথা, আমার দেশে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করা যায় কিন্তু এখানে নানা জটিলতা কারণ আমি বিদেশি।
আজ এক মাস হল দেশ ছেড়ে প্রবাসী। মালেশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বর্তমানে অবস্থান। আমাদের দেশ থেকে অনেক উন্নত এই দেশ, অসংখ্য বাঙালি এখানে অবস্থান করছে। সমস্যা হল এখানে যে পরিমাণ বাঙালি আছে তার মধ্যে বেশিরভাগই অবৈধ। যাদের ভিসার মেয়াদ নেই, পাসপোর্ট নেই। এর মধ্যে কিছু আছে যারা নিজের ইচ্ছায় ভিসার মেয়াদ বাড়ায়নি লুকিয়ে কাজ করছে, কাউকে ভিসা দেয়নি, আর এমন কিছু লোক আছে যাদের পাসপোর্ট দালালের কাছে। এখানে এসে যা দেখলাম এখানে বাংলাদেশ থেকে আসা দালালের সংখ্যাও অনেক বেশি। এ দালালরা যখন দেশ থেকে একজন শ্রমিককে এখানে নিয়ে এসে তার পাসপোর্ট রেখে দেয় এবং সেই শ্রমিকের প্রতি মাসের বেতনের ২৫% কেটে নেয়।
প্রবাসে এসে বুঝতে পেরেছি পাসপোর্ট কত মূল্যবান জিনিস! যেদিন মালয়েশিয়াতে প্রথম এসেছি সেদিন আমার বন্ধু অসীম বলেছিল তুই হারিয়ে যাবি কিন্তু পাসপোর্ট যেন না হারায়। যেখানেই যাই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখতে হয়। বিদেশে পাসপোর্টই আমার পরিচয়। বাঙালি যারা তাদের পুলিশ বেশি আটকায় পাসপোর্ট দেখার জন্য। আমি স্টুডেন্ট বলে আমার বেশি সমস্যা হয় না; পাসপোর্ট দেখালেই ছেড়ে দেয়। যাদের ওয়ার্ক ভিসা তারা বাইরে ঘোরাঘুরি করলে পুলিশ ঝামেলা করে। টাকা না দিলে ছাড়ে না। যা দেখলাম যা শুনলাম তাতে বুঝলাম এখানে বাঙালি শ্রমিকরা ভালো নেই।

No comments:
Post a Comment