Wednesday, December 26, 2012

নেতার কম্বল বিতরণ কর্মসূচি

রফিকুল ইসলাম সাগর 
রাজনৈতিক দলের একের পর এক কর্মসূচির কারণে কখনো কখনো চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় দেশের সাধারণ মানুষের। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে কখনো হামলা পাল্টা হামলায় দৌড়ানি খেয়ে জীবন নিয়ে পালাতে দেখা যায় সাধারণ জনগনকে। 
''ঘেরাও কর্মসূচি, অবরোধ কর্মসূচি, ভাংচুর কর্মসূচি, আগুন দেয়া কর্মসূচি, আগুন নিভানো কর্মসূচি, দাবি আদায় কর্মসূচি, শীর্ষ সন্ত্রাসী কাসেমের জেল থেকে মুক্তি পাওয়া উপলক্ষে আনন্দ কর্মসূচি, ধর মার কাট ও কোপা কর্মসূচি'' এরকম নানান কিসিমের কর্মসূচিতে কখনো কখনো গোটা দেশও অচল হয়ে পড়ে। এমন কর্মসূচির কারণে কারো কারো জীবনও চলে যায় কিন্তু কর্মসূচি শেষ হয়না, যার জীবন যায় তাকে নিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মসূচি। 

ক'দিন আগে একটি স্কুলে কম্বল বিতরণ কর্মসূচিতে গিয়ে দেখতে পেলাম, একজন রাজনৈতিক দলের নেতা হাসি মুখে কম্বল বিতরণ করছেন। নেতার আসে পাশে গরিব দুঃখী যারা কম্বল নিতে এসেছেন তাদের চেয়ে নেতার সমর্থক ক্যাডার বাহিনীর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়ল। নেতা গরিব মানুষের হাতে কম্বল তুলে দিচ্ছেন আরেকজন দক্ষ ক্যামেরাম্যান সেই দৃশ্য তার ক্যামেরায় ধারণ করছেন। বুঝতে পারলাম উনি নেতার পার্সোনাল ক্যামেরাম্যান। এছাড়াও নেতার চার পাশ ঘিরে কম্বল বিতরণের দৃশ্য ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করছেন দেশের সব ক'টি চ্যানেলের সংবাদকর্মীরা। এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল এইটা কম্বল বিতরণ কর্মসূচি না ভিডিও ধারণ কর্মসূচি। 

এর মধ্যে একজন আমার হাতে তার মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ''ওই মিয়া এই লন আমার মোবাইল, আমি নেতার সাইড দিয়া খারামু আপনি আমার একটা ফটো তুলবেন, একটু সুন্দর কইরা তুলবেন নেতার সাথে আমার চেহারা যেন ভালো ভাবে দেখা যায়, আমি এই ফটোটা দিয়া একটা পোস্টার বানাইয়া মহল্লার দেয়ালে দেয়ালে লাগামু।'' আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, ঠিক আছে। ফটো তুলা শেষে তাকে প্রশ্ন করলাম, নেতার দলে আপনার পোস্ট কি? উত্তরে তিনি বললেন, ''আমি দলের একজন অলিখিত সদস্য। নেতার সাথে আমার ছবি পোস্টারে দিলে একটা পদ পাইয়া যামু নিশ্চিত।''

কয়েক মিনিট পরেই শেষ হয়ে গেল বিতরণের সব কম্বল। পাচ হাজার মানুষের মধ্যে কম্বল পেল মাত্র একশ জন। 'কম্বল শেষ' এই খবর পিছনের দিকে থাকা মানুষের কানে পৌছা মাত্রই শুরু হয় হইচই, ঠেলাঠেলি আর মারামারি। যারা কম্বল পেয়েছে আর যারা কম্বল নিতে এসে পায়নি তাদের মধ্যে লাগলো কাড়াকাড়ি। এমন অবস্থায় কম্বল আনতে গিয়ে ঠেলাঠেলিতে অনেকের নিজের সম্বল লুঙ্গি সামলানো দায় হয়ে পড়ল। এই ভিড়ে অনেককে খুলে যাওয়া লুঙ্গি রেখেই দৌড়াতে হলো, জীবনের চেয়ে তো আর লুঙ্গি বড় নয়। এদিকে এ দৃশ্য প্রতিটা চ্যানেল লাইভ দেখানো শুরু করলো। নিরাপত্তাজনিত কারণে নেতা দ্রুত স্পট থেকে কেটে পড়লেন। কোনরকমে আমিও স্কুলের দেয়াল পেরিয়ে বাইরে বেরুলাম। বেরহয়েই পথে দেখতে পেলাম সেই চিরচেনা যানজটের রূপ। যানের সাথে মানুষের জট।
নেতা স্কুল ত্যাগ করার সাথে সাথেই এলাকায় শুরু হয় দীর্ঘ যানজট। একজন আমাকে বললেন, ভাই হাইটা চলে যান আজ এই যানজট শেষ হইতে রাইত হইয়া যাইবো। অবশেষে পাচ কিলোমিটার পথ হেটেই বাড়িতে ফিরতে হলো। 

এর আগে রিক্সায় চড়ে সে এলাকায় যাওয়ার সময় খেয়াল করেছিলাম (তখন নেতা স্কুলে এসে পৌছেনি) পথে কোনো যানজট নেই। অথচ এখানে সারা বছর যানজট লেগেই থাকত। দেখতে পেলাম, যানজট নিয়ন্ত্রণে অসংখ্য পুলিশ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় কাজ করেছেন। সব কিছু কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। পথের সব গুলো ভ্রাম্যমান দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে, এমন চিত্র দেখে অবাকই হয়েছিলাম। নেতার আগমন বলে কথা। 


এই লেখাটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক অলস মস্তিস্কের অবদান। বাস্তবের সাথে এর কোনো  মিল নেই।

No comments:

Post a Comment