Wednesday, April 22, 2015

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশি বেশে মিয়ানমারের ভিক্ষুক

রফিকুল ইসলাম সাগর, কুয়ালালামপুর:

কুয়ালালামপুর শহরের আম্পাং এলাকার একটি মার্কেটের নাম 'আম্পাং পয়েন্ট'। মার্কেটটির সামনে রাস্তা পারাপারের জন্য একটি ওভার ব্রিজ আছে। রাস্তা পারাপারের জন্য যতবার ব্রিজটি ব্যবহার করেছি, ততবাবাই ব্রিজটির উপরে এক পাশের সিড়ির কোনায় একজন ভিক্ষুককে চোখে পড়ত। তার চেহারা, শারীরিক গঠন ও পোশাক দেখে বাঙালী বলেই ভেবে নিয়েছিলাম। তাকে দেখলেই মন খারাপ হতো আমার। আমার জাতি ভাই বিদেশে ভিক্ষে করছে! এই ভেবে একই জাতি হিসেবে খুব অপমান বোধ করতাম। এ দেশের মানুষগুলো এই ভিক্ষুককে দেখে যে আমাদের সম্পর্কে অনেক বাজে ধারণা পায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। একদিন আমার এক মালয়েশিয়ান বন্ধু এ ভিক্ষুককে দেখিয়ে আমাকে প্রশ্ন করেছিল, কিরে এই লোকটা তোদের দেশী তাইনা? সেদিন আমি খুব লজ্জা পেয়েছিলাম। বন্ধু আমাকে আরো বলেছিল, সে নাকি বিদেশী কোন টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন দেখেছিল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বস্তিবাসীর জীবন চিত্র দেখানো হয়েছিল। এ প্রতিবেদন দেখে বন্ধুর ধারণা হয়েছিল, আমাদের দেশের মানুষ খেতে পায়না। আমি তাকে বুঝালাম, এটা তার ভুল ধারণা। বন্ধু বুঝলো আমার কথা। আমি পুরোপুরি সক্ষম হয়েছিলাম, বাংলাদেশ সম্পর্কে তার নেগেটিভ ধারণা পাল্টে দিতে।

ওভার ব্রিজের উপর ভিক্ষুকটার সাথে একদিন কথা বলেছিলাম। বাংলা ভাষায় কথা বলেছিল। চট্টগ্রামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছিল। পূর্বে কিছুটা সন্দেহ থাকলেও তখন আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম, সে বাংলাদেশী। তাকে ভিক্ষা না করতে বুঝিয়ে কোনো লাভ হয়নি। যারা ভিক্ষা করে তাদের বুঝিয়ে কখনো লাভ হয়না। এটা কিছু কিছু মানুষের স্বভাবের দোষ। আমি মনে করি যারা ভিক্ষা করে তাদের মনুষত্ববোধ বলতে কিছুই নেই। যারা ভিক্ষা করে তাদের ভিক্ষা করার কারণ হিসেবে নানান রকমের যুক্তি প্রস্তুত করাই থাকে। ভিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্তির শত পথ দেখিয়ে দিলেও তারা পেশা পরিবর্তন করবে না।
এই ভিক্ষুককে বাঙালী হিসেবে জেনে থাকলেও একদিন একজন বড় ভাই আমার ধারণা পাল্টে দিয়ে জানালেন, এ ভিক্ষুকটি বাঙালী না, সে মায়ানমারী। বড় ভাই আমাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রমাণ করলেন যে, আসলেই সে মিয়ানমারি। এ তথ্য জেনে তখন অনুভূতি ছিল অন্যরকম। সেদিন থেকে ওভার ব্রিজটির উপরে হেটে যাওয়ার সময় আগে মাথা নিচু করে হাটলেও মাথা উচু করে হাটা শিখলাম। মিয়ানমারি হয়েও ভিক্ষুকটা নিজেকে বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিলেও প্রমান হলো, সত্য কোনদিন গোপন থাকেনা।

No comments:

Post a Comment