রফিকুল ইসলাম সাগর
সহকর্মী হিসেবে মালাইরা খুব খারাপ। বিশেষ করে সহকর্মী যদি হয় বিদেশি। নিজেরা কাজ না করে তারা নিজের কাজ বিদেশি সহকর্মীদের দিয়ে করিয়ে নেয়ার চেষ্টায় থাকে সবসময়। তারা কাজ না করলেও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু বলে না। কিন্তু বিদেশি শ্রমিকরা পাঁচ মিনিট কাজ ছেড়ে বিশ্রাম নিলে বসদের বকা-ঝকা, চাকরি হারানোর ভয়। বিদেশি শ্রমিক যখন মালাই সহকর্মীদের আদেশ অমান্য করে তখন মালাইরা বসদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে। পরবর্তীতে বসরা মালাইদের আদেশ অমান্য করার দায়ে শাস্তিস্বরূপ বিদেশি শ্রমিকদের কাজের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। ভাষাগত জটিলতার কারণে এবং তাদের নিজেদের দেশ হওয়ার কারণে মিথ্যার জয় হয়, পরাজয় হয় বিদেশি শ্রমিকদের এমন অভিযোগ মালয়েশিয়া প্রবাসী সব বাঙালির।
এছাড়া কাজের সময় মালাইরা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে। একই পদবির বাঙালি শ্রমিকদের তারা কাজ করার আদেশ দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে নেয়। বিদেশি দেশ হওয়ার কারণে বাঙালিরা তাদের সব আদেশ পালন করে। বিদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে যে ‘বিদেশ বাড়িতে এসেছি ঝগড়া করলে ক্ষতি’। বাঙালিদের বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হয় না। মালাইদের কাজের বিরতি যদি দেয়া হয় ১ ঘণ্টা সেখানে বাঙালি শ্রমিকরা পায় ৩০ মিনিট। মালাইরা ১ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে বিরতি করলেও তাতে কিছু আসে যায় না। বাঙালি দেরি করলে সইতে হয় চরম অপমান। মালাইদের চোখে বাঙালি খুব নিচু জাতি। তাদের ধারণা বাংলাদেশের মানুষ খেতে পায় না, মূর্খ জাতি। তারা জানে না বিদেশ আসার জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি ভালো হতো, সরকার যদি সাধারণ মানুষের দিকে সঠিক দৃষ্টি দিত তাহলে আমাদের দেশের মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হতো না বলে আমার মনে হয়।
মালাইরা সাপ্তাহিক ছুটি পায় একদিন। এছাড়া সরকারি বন্ধের দিন তারা ছুটি কাটায়। হাতেগোনা ক’জন বাঙালি সপ্তাহে একদিন ছুটি পেলেও ছুটি পায় না বেশির ভাগ বাঙালি। প্রতিবাদ করলে ‘তোদের রেখেছি তো কাজ করার জন্য’ এমন কথা শুনতে হয়। মালাইরা কাজ করে ৮ ঘণ্টা আর বাঙালিদের কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টা। তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত থাকলে ওভারটাইম কাজ করতে হয় কিন্তু মালাইরা ওভারটাইম কাজ করতে চায় না।
সহকর্মী হিসেবে তামিলরাও খুব একটা সুবিধার না। সবসময় ঝগড়ার মনোভাব তাদের। বেশিরভাগ ভারতীয় তামিলদের মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব আছে। তাদের বাবা-দাদারা অনেক আগে মালয়েশিয়া এসেছিল। তাদের দাপট প্রকৃত মালয়েশিয়ানদের চেয়েও বেশি। আর এই কারণে প্রকৃত মালয়েশিয়ানরা তাদের খুব একটা পছন্দ করে না। তবে ভারতীয় তামিলরা এখানে মালাইদের চেয়ে বেশি পড়াশুনা করে।
অনেক চাইনিজও অনেক আগে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছে। সহকর্মী হিসেবে চাইনিজরা খুব ভালো। তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারা অন্যকে ছোট করে দেখে না। নিজের কাজ নিজে করে। কে কী করল সেদিকে কু-দৃষ্টি দেয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করে না তারা।
কথায় আছে নিজের দেশ নিজের দেশই। বিদেশে আমাদের পদে পদে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা সব দিকেই আমাদের জন্য ভিন্ন দৃষ্টি।
২০ জুন,২০১৩ সাপ্তাহিকে প্রকাশিত
সহকর্মী হিসেবে মালাইরা খুব খারাপ। বিশেষ করে সহকর্মী যদি হয় বিদেশি। নিজেরা কাজ না করে তারা নিজের কাজ বিদেশি সহকর্মীদের দিয়ে করিয়ে নেয়ার চেষ্টায় থাকে সবসময়। তারা কাজ না করলেও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিছু বলে না। কিন্তু বিদেশি শ্রমিকরা পাঁচ মিনিট কাজ ছেড়ে বিশ্রাম নিলে বসদের বকা-ঝকা, চাকরি হারানোর ভয়। বিদেশি শ্রমিক যখন মালাই সহকর্মীদের আদেশ অমান্য করে তখন মালাইরা বসদের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করে। পরবর্তীতে বসরা মালাইদের আদেশ অমান্য করার দায়ে শাস্তিস্বরূপ বিদেশি শ্রমিকদের কাজের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। ভাষাগত জটিলতার কারণে এবং তাদের নিজেদের দেশ হওয়ার কারণে মিথ্যার জয় হয়, পরাজয় হয় বিদেশি শ্রমিকদের এমন অভিযোগ মালয়েশিয়া প্রবাসী সব বাঙালির।
এছাড়া কাজের সময় মালাইরা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে। একই পদবির বাঙালি শ্রমিকদের তারা কাজ করার আদেশ দিয়ে তাদের কাজ করিয়ে নেয়। বিদেশি দেশ হওয়ার কারণে বাঙালিরা তাদের সব আদেশ পালন করে। বিদেশে একটি কথা প্রচলিত আছে যে ‘বিদেশ বাড়িতে এসেছি ঝগড়া করলে ক্ষতি’। বাঙালিদের বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হয় না। মালাইদের কাজের বিরতি যদি দেয়া হয় ১ ঘণ্টা সেখানে বাঙালি শ্রমিকরা পায় ৩০ মিনিট। মালাইরা ১ ঘণ্টার বেশি সময় নিয়ে বিরতি করলেও তাতে কিছু আসে যায় না। বাঙালি দেরি করলে সইতে হয় চরম অপমান। মালাইদের চোখে বাঙালি খুব নিচু জাতি। তাদের ধারণা বাংলাদেশের মানুষ খেতে পায় না, মূর্খ জাতি। তারা জানে না বিদেশ আসার জন্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দায়ী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি ভালো হতো, সরকার যদি সাধারণ মানুষের দিকে সঠিক দৃষ্টি দিত তাহলে আমাদের দেশের মানুষের বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হতো না বলে আমার মনে হয়।
মালাইরা সাপ্তাহিক ছুটি পায় একদিন। এছাড়া সরকারি বন্ধের দিন তারা ছুটি কাটায়। হাতেগোনা ক’জন বাঙালি সপ্তাহে একদিন ছুটি পেলেও ছুটি পায় না বেশির ভাগ বাঙালি। প্রতিবাদ করলে ‘তোদের রেখেছি তো কাজ করার জন্য’ এমন কথা শুনতে হয়। মালাইরা কাজ করে ৮ ঘণ্টা আর বাঙালিদের কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টা। তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠান ব্যস্ত থাকলে ওভারটাইম কাজ করতে হয় কিন্তু মালাইরা ওভারটাইম কাজ করতে চায় না।
সহকর্মী হিসেবে তামিলরাও খুব একটা সুবিধার না। সবসময় ঝগড়ার মনোভাব তাদের। বেশিরভাগ ভারতীয় তামিলদের মালয়েশিয়ায় নাগরিকত্ব আছে। তাদের বাবা-দাদারা অনেক আগে মালয়েশিয়া এসেছিল। তাদের দাপট প্রকৃত মালয়েশিয়ানদের চেয়েও বেশি। আর এই কারণে প্রকৃত মালয়েশিয়ানরা তাদের খুব একটা পছন্দ করে না। তবে ভারতীয় তামিলরা এখানে মালাইদের চেয়ে বেশি পড়াশুনা করে।
অনেক চাইনিজও অনেক আগে মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছে। সহকর্মী হিসেবে চাইনিজরা খুব ভালো। তারা কঠোর পরিশ্রমী। তারা অন্যকে ছোট করে দেখে না। নিজের কাজ নিজে করে। কে কী করল সেদিকে কু-দৃষ্টি দেয়ার কোনো প্রয়োজন মনে করে না তারা।
কথায় আছে নিজের দেশ নিজের দেশই। বিদেশে আমাদের পদে পদে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা সব দিকেই আমাদের জন্য ভিন্ন দৃষ্টি।
২০ জুন,২০১৩ সাপ্তাহিকে প্রকাশিত

No comments:
Post a Comment