Tuesday, June 30, 2015

মালয়েশিয়ায় গৃহবন্দি বাংলাদেশিরা

রফিকুল ইসলাম সাগর 

অবৈধদের ধরতে মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতার অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মালয়েশিয়া জুড়ে চলছে গ্রেফতার আতঙ্ক। নতুন অভিবাসীদের জন্যও ইমিগ্রেশনে কড়াকড়ি ব্যবস্থা। এই অভিযান এই পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অবৈধ গ্রেফতার অভিযান গুলোর মধ্যে সব চেয়ে কার্যকরী অভিযান। সুযোগ দেয়ার পরেও যারা মালয়েশিয়া থাকতে বৈধ কাগজপত্র করার সুযোগ কাজে লাগাননি তারা এখন আছেন ভয়ে। কেউ কেউ নিজেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে, কেউ দালালের মাধ্যমে। কেউ প্রতারক দালালের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন কাগজপত্র বৈধতা করার জন্য কিন্তু দালাল আশ্বাস দিয়ে দিয়ে কাগজপত্র বৈধ করে দেয়নি টাকা নিয়ে ধরা ছোয়ার বাইরে চলে গেছে। প্রতারণার শিকার এই সব প্রবাসীরা পড়েছেন মহা বিপদে। এছাড়া অনেক পুরাতন প্রবাসী আছে যারা নিজের ইচ্ছেতেই বৈধতা করনের সুযোগ নেয়নি। এবারের গ্রেফতার অভিযান এতো কার্যকরী হবে তারা ধারণা করতে পারেনি। 
অবৈধরা চলছেন খুব সতর্কতার সাথে। অনেক অবৈধ বাঙালি কাজ ছেড়ে গৃহবন্দী দিন যাপন করছেন। যাদের বৈধতা আছে তারাও গ্রেফতার এড়াতে চলাফেরা করছেন খুব সতর্কভাবে। বৈধ কাগজপত্র, পাসপোর্ট সব সময় সঙ্গে রাখছেন। 

গত কিছুদিনে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ বাঙালি পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের পর বৈধ কাগজপত্র দেখাতে সক্ষমদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশ এম্বাসীতে প্রচন্ড ভির দেখা গেছে। অবৈধরা গ্রেফতার এবং জেলে বন্দী জীবন এড়াতে ট্রাভেল পাশ করার জন্য আসছেন এম্বাসীতে। এই সুযোগে এম্বাসীর সামনে বেড়েছে দালালের আনাগোনা। ইতিমধ্যে অনেক মালয়েশিয়া প্রবাসী বাঙালি ট্রাভেল পাশ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে ট্রাভেল পাশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। অবৈধদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল পাশের সুযোগ আছে। কিন্তু ট্রাভেল পাশ পেতে নানান রকমের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিছু অসাধু চক্র অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ এম্বাসীতে ট্রাভেল পাশ নিতে আশা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বাঙালির কাছে জানা যায় ''তিনি পাচ বছর আগে মালয়েশিয়া এসেছিলেন। শাহ-আলম নামক জায়গার যেই কোম্পানিতে কাজ করতেন গতবছরের প্রথম দিকে সেই কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়। তাকে দেশে ফিরে যেতে বলা হলে তিনি ফিরে আসেননি। তার পাসপোর্ট কোম্পানিতে রেখেই পালিয়ে আসেন কুয়ালালামপুর শহরে। আশ্রয় নেন এক বন্ধুর কাছে। তারপর থেকেই সে অবৈধ। বৈধতাকরনের জন্য এক দালালকে দিয়েছিলেন পনেরশ রিঙ্গিত। দীর্ঘদিন দালাল পাসপোর্ট ও ভিসা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এখন ধরা ছোয়ার বাইরে। এখন তিনি গ্রেফতার এড়াতে ট্রাভেল পাশ নিয়ে দেশে ফিরে যেতে চান।'' 

চট্টগ্রামের সালাউদ্দিন জানায় এক বছর আগে দালাল মারফত মালয়েশিয়া আসে ট্যুরিস্ট ভিসায়। মালয়েশিয়া আসার আগে সে বুঝতে পারেনি তাকে ট্যুরিস্ট ভিসায় পাঠানো হচ্ছে। পৌছারপর দালাল তাকে একটি হোটেলে কাজ দিয়ে উধাও হয়ে যায়। সেই কাজ টিকে মাত্র এক মাস। পরবর্তিতে দিন কাটায় খুব করুন ভাবে। পরিচিতদের আশ্রয়ে কাজ পায় ঠিকই কিন্তু সব সময় পুলিশের ভয়। বর্তমানে গ্রেফতার অভিযান চলছে সেই ভয়ে কাজে যায় না। দেশে ফিরে আসতে ট্রাভেল পাশের জন্য আবেদন করেছেন। 

মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত ৫-৬ বছর পুরাতন অনেক বৈধ বাঙালি নতুন করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে না। ওয়াংসামাজু নামক জায়গায় ঢাকার মিলন নামে এক বাঙালির সাথে কথা হয়। জানা যায় মালয়েশিয়াতে পাচ বছর যাবৎ আছেন। প্রতিবছর বছর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ পেলেও এই বছরের শুরুতে পাচ বছর শেষ হওয়ার পর আর ভিসা পাননি। কয়েকমাস যাবৎ তিনি অবৈধ। এখন দেশে ফিরে যাবেন বলে ঠিক করেছেন। ট্রাভেল পাশ হাতে পেয়েছেন। সব ঠিক থাকলে অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে যাবেন। 

কথা হয়েছে আরো কিছু সংখ্যক অবৈধ প্রবাসী বাঙালিদের সাথে। সরকারের কাছে তাদের দাবি দেশে ফিরে আসতে তারা যেন সহজ ভাবে ট্রাভেল পাশ পায়। বাঙালি যাদের ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সরকারের একটি সুষ্ঠু সিধান্তের অপেক্ষায় আছেন। দীর্ঘদিন জেলে বন্দী না থেকে দেশে ফিরতে চান অবৈধরা। 

২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ দৈনিক বর্তমানে প্রকাশিত।

No comments:

Post a Comment