Saturday, January 28, 2012

একটি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

রফিকুল ইসলাম সাগর

নিজাম আর সুমি দু'জন খালাতো ভাই বোন I দু'জন দুজনকে অসম্ভব ভালবাসে I এ বিষয়ে পরিবারের কেউ কিছু জানে না I ভবিষ্যতে নিজেদের সংসার নিয়ে দুজনের চোখে অনেক স্বপ্ন I সুমির বাবা-মা ওদের বিয়েতে রাজি হবে কিনা তা নিয়ে দু'জন খুব চিন্তিত I সুমিদের পারিবারিক আর্থিক অবস্থা নিজামদের চেয়ে অনেক ভাল I  সুমি ঢাকায় থাকে আর নিজাম গ্রামে I সুমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে,নিজাম খুব বেশি পড়াশুনা করেনি I নিজামের মধ্যে এমন কিছু আছে যা সুমিকে নিজামকে ভালবাসতে বাধ্য করেছে I সুমিকে এক নজর দেখার জন্য নিজাম  ক'দিন পর পর খালার বাসায় বেড়াতে চলে আসে I দু'জন দুজনকে কাছে পেয়ে খুব খুশি হয় I অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা,ইশারায় কথা বলা I কাছে পেলে দুজনের ভয়টা আরও বেড়ে যায় I 
-আমরা দু'জন সারাজীবন এক সাথে থাকতে পারবো তো...?     
করুন সুরে উত্তর দিলো নিজাম পারবো তুমি কোনও চিন্তা কর না I এর চেয়ে বেশি তার আর বলার কিছুই নেই I  রাত শেষ হলে সকালে নিজাম গ্রামে চলে যাবে,অনেকদিন দেখা হবে না কথা হবে না সুমির সাথে I সকালে গ্রামে ফিরে যাওয়ার সময় নিজামকে সুমি বললো আমাকে তাড়াতাড়ি তোমার কাছে নিয়ে যাও I সুমিকে কাছে পেতে হলে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে I নিজের পরিচয় বানাতে হবে I  নিজাম ভাল করেই জানে বেকার অশিক্ষিত ছেলের কাছে কোনও বাবা-মা তার মেয়েকে বিয়ে দিবেনা I বিয়ের কথা বলবেই বা কোন মুখে I নিজাম সিদ্ধান্ত নিল বিদেশে যাবে I সুমিও রাজি হলো I বড় চাচার সহযোগিতায় সব কিছু ঠিক হলো I নিজাম দুবাই যাবে বিমান বন্দরে সবাই এলো মা-বাবা,বড় বোন,বড় চাচা I সুমির আসার কথা ছিল কিন্তূ আসেনি I সুমির ছোট ভাই নিজামের হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললো এটা অপু দিয়েছে I বিমানে বসে চিঠিটি খুলল নিজাম I লেখা ছিল......
তোমার দুরে চলে যাওয়া দেখতে আমার খুব কষ্ট হবে I তাই তোমাকে বিদায় জানাতে আসলাম না I সব কিছু কেমন জানি অন্ধকার মনে হচ্হে I আপনজন গুলো কাছে আছে তবুও নিজেকে একা মনে হচ্হে I তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে I তুমি ফিরে এসো আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব I 
ইতি,
তোমার আমি I 
 মনের অজান্তে চোখে জল আসে গেল I  মনে মনে বললো জীবনে যদি টাকা পয়সার প্রয়োজন না থাকতো তাহলে কত ভালই না হত I মানুষ মানুষের মধ্যে বেবধান থাকতো না I ধনী গরিবের এই পার্থক্য থাকতো না I দুবাই পৌছে প্রথম ফোন করলো সুমি কে I সুমির সাথে কথা বলে তৃপ্তি অনুভব করলো নিজাম I নিমিষেই যেন দুঃখ বেদনা দূর হয়ে গেল I প্রতিদিন ফোনে কথা হয় দু'জনের I দিন অতিক্রম হওয়ার সাথে সাথে স্বপ্ন গুলো যেন কাছে চলে আসছে I এখন শুধূ অপেক্ষা I এক বছর পর নিজাম সুমিকে জানালো সে দেশে ফিরে আসছে I পারিবারিক ভাবে দুই পরিবারের কথা হলো I সবাই রাজি I স্বপ্ন গুলো এখন সত্যি হওয়ার পথে I দু'জন কাছে থাকবে,সুখে থাকবে ও ভাল থাকবে I রাতের বিমানে ঢাকা আসবে নিজাম I আনন্দের শেষ নেই I ওদিকে সুমি এতদিন পর তার পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে দেখবে I মনে অনেক কৌতুহল I প্রাণ ভোরে দেখবে মনের মানুষটিকে I শেষ সময়ে আসে প্রতিক্ষার প্রহর যেন আর কাটেনা I নিজাম সুমিকে জানিয়ে দিলো আমি বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য টেক্সীতে উঠেছি I আমার মোবাইল এখন বন্ধ করে দিবো I দেশে এসে তোমার সাথে সরাসরি কথা হবে I তোমরা ভোর ৬ টায় ঢাকা বিমান বন্দরে আমার জন্য অপেক্ষা কর I 
ভোরে সবার অপেক্ষা I সবার দৃষ্টি গেইট এর দিকে I মনে প্রশ্ন এখনো বের হচ্ছে না কেন? অপেক্ষা.....অপেক্ষা....অপেক্ষা......সকাল ৭ টা,তারপর ৮ টা,এভাবে ৯ টা,১০ টা,১১ টা I নিজামের কোনও খোজ নেই I ফ্লাইট মিস হইনি তো I দুবাই থেকে বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের সেই বিমানটি সঠিক সমেয়েই এসেছে কিন্তূ নিজাম আসেনি I সবাই খুব চিন্তায় পড়ে গেল I ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলো কিন্তূ মোবাইল তো বন্ধ I সুমি খুব ভয় পাচ্ছিল I এদিক থেকে ওদিক ছুটা ছুটি করছিল I কিছুতেই মন স্থির করতে পারছিল না I চোখের জল আটকিয়ে রাখা যাছিল না I পরদিন সকালে খবর এলো টেক্সীতে করে বিমান বন্দরে আসার পথে নিজাম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় I তিনদিন পর নিজামের লাশ আনা হলো I   নিজাম সুমির কাছে এলো ঠিকই কিন্তূ জীবত না মৃতI  

No comments:

Post a Comment