রফিকুল ইসলাম সাগর
রামপুরা থেকে মোটরসাইকেলে করে হাতিরঝিলের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম, তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দেড়টা। গাড়ির চলাচল খুব একটা ছিল না। মানুষের চলাচলও খুব কম। চলতি পথে লক্ষ্য করলাম রাস্তার ডান পাশে ফুটপাতের ওপর একটি মেয়ে একটি ছেলের শার্টের কলার চেপে ধরে আছে, ছেলেটি পালানোর চেষ্টায় মেয়েটিকে আঘাত করছে। আমি তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেল থামিয়ে এগিয়ে যাই সেখানে। মেয়েটির বয়স ১৩ কি ১৪ বছর হবে। ছেলেটির বয়স ১৬ কি ১৭ হবে।
সম্ভবত মেয়েটির বাড়ি আশপাশেই, কোচিং থেকে বাড়ি ফিরছিল। আমি কাছে গিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই আঘাতের চিহ্ন।
মেয়েটিকে ছেলেটা থাপ্পড়-ঘুষি মেরেছে এগুলো তারই চিহ্ন। এত আঘাত সহ্য করেও মেয়েটি ছেলেটির কলার চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল যদি কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আমি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম কী হয়েছে। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনেক জেদে আমাকে বলল_ আঙ্কেল খুব অশ্লীল... একটা কাজ করেছে। কথাটা বলতে অনেক লজ্জা পাচ্ছিল, তারপরও বাচ্চা মেয়েটি সাহস করে কথাটা আমাকে বলেছে। আমি অবাক হলাম। প্রিয় পাঠক যে অশ্লীল কাজ করার কথা মেয়েটি আমাকে বলেছে, তা এই লেখায় প্রকাশ করার মতো নয়। ছেলেটি কাজটি করে পালাতে চেয়েছিল কিন্তু প্রতিবাদী, খুব জেদি মেয়েটির আত্মসম্মানে লাগে।
সে কিছুতেই মানতে পারেনি, তাই সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির কলার চেপে ধরে। ছেলেটি সেখান থেকে পালানোর জন্য মেয়েটিকে উপর্যপুরি আঘাত করেও মেয়েটির হাত থেকে মুক্তি পায়নি। আমি মেয়েটিকে অনুরোধ করি, তাতেও লাভ হয়নি। মেয়েটি শুধু একটি কথাই বলছিল, আঙ্কেল আপনার মোবাইল থেকে আমার ভাইয়াকে একটা ফোন দেন। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না তাকে কী শাস্তি দেওয়া যায়। কত নিচু মানসিকতা থাকলে এমন কাজ করা যায়, তাই ভাবছিলাম। শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করে ছেলেটাকে কয়টা থাপ্পড় দিলাম। এরই মধ্যে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক এগিয়ে এসে ঘটনা কিছু বুঝতে পেরে বললেন_ 'এসব পোলাপানের লাইগা মা-বোনরে ঘর থেকে বের হইতে দিতে ভয় করে।' মেয়েটি তার সিদ্ধান্তে অটুট, কিছুতেই ছেলেটাকে যেতে দেবে না। আমি তার বড় ভাইকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বললাম। মেয়েটির ভাই এলো, সঙ্গে আরও কয়জন ছিল। আমার জরুরি কাজ থাকায় মেয়েটির ভাই সেখানে পেঁৗছার পর চলে এলাম। ইভ টিজিং, নারীর শ্লীলতাহানি ও নারী নির্যাতন এরকম অনেক ঘটনা শুনেছি। কিন্তু এরকম ঘটনা সামনাসামনি আর কোনোদিন পড়েনি। ভাবতে অবাক লাগছিল, আমাদের দেশের নারীরা কতটা অনিরাপদ। নারীদের নিরাপত্তায় আমরা কত দুর্বল। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে।
বেশিরভাগ নারী এমন পরিস্থিতিতে লজ্জায় কাউকে কিছু বলে না, প্রতিবাদ করে না। এতে এমন ছেলেদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। স্যালুট সেই মেয়েটিকে, স্যালুট তার সাহসিকতাকে, স্যালুট তার মা-বাবাকে।
তার সেই প্রতিবাদ প্রমাণ করে সে ভালো পরিবারের মেয়ে। অবশ্যই সেই মা-বাবা আদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন তাদের মেয়েকে। আর ধিক্কার সেসব ছেলেদের, যারা রাস্তায় এমন কাজ করে। ধিক্কার সেসব মা-বাবাকে, যারা তাদের ছেলেকে কিছুই শিক্ষা দেন না, নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। যে কারণে ছেলে এমন কাজ করে বেড়ায়।
২৮ মে ২০১৩, সমকালের নারীস্থান পাতায় প্রকাশিত
রামপুরা থেকে মোটরসাইকেলে করে হাতিরঝিলের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম, তখন ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দেড়টা। গাড়ির চলাচল খুব একটা ছিল না। মানুষের চলাচলও খুব কম। চলতি পথে লক্ষ্য করলাম রাস্তার ডান পাশে ফুটপাতের ওপর একটি মেয়ে একটি ছেলের শার্টের কলার চেপে ধরে আছে, ছেলেটি পালানোর চেষ্টায় মেয়েটিকে আঘাত করছে। আমি তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেল থামিয়ে এগিয়ে যাই সেখানে। মেয়েটির বয়স ১৩ কি ১৪ বছর হবে। ছেলেটির বয়স ১৬ কি ১৭ হবে।
সম্ভবত মেয়েটির বাড়ি আশপাশেই, কোচিং থেকে বাড়ি ফিরছিল। আমি কাছে গিয়ে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই আঘাতের চিহ্ন।
মেয়েটিকে ছেলেটা থাপ্পড়-ঘুষি মেরেছে এগুলো তারই চিহ্ন। এত আঘাত সহ্য করেও মেয়েটি ছেলেটির কলার চেপে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল যদি কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আমি মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম কী হয়েছে। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনেক জেদে আমাকে বলল_ আঙ্কেল খুব অশ্লীল... একটা কাজ করেছে। কথাটা বলতে অনেক লজ্জা পাচ্ছিল, তারপরও বাচ্চা মেয়েটি সাহস করে কথাটা আমাকে বলেছে। আমি অবাক হলাম। প্রিয় পাঠক যে অশ্লীল কাজ করার কথা মেয়েটি আমাকে বলেছে, তা এই লেখায় প্রকাশ করার মতো নয়। ছেলেটি কাজটি করে পালাতে চেয়েছিল কিন্তু প্রতিবাদী, খুব জেদি মেয়েটির আত্মসম্মানে লাগে।
সে কিছুতেই মানতে পারেনি, তাই সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটির কলার চেপে ধরে। ছেলেটি সেখান থেকে পালানোর জন্য মেয়েটিকে উপর্যপুরি আঘাত করেও মেয়েটির হাত থেকে মুক্তি পায়নি। আমি মেয়েটিকে অনুরোধ করি, তাতেও লাভ হয়নি। মেয়েটি শুধু একটি কথাই বলছিল, আঙ্কেল আপনার মোবাইল থেকে আমার ভাইয়াকে একটা ফোন দেন। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না তাকে কী শাস্তি দেওয়া যায়। কত নিচু মানসিকতা থাকলে এমন কাজ করা যায়, তাই ভাবছিলাম। শরীরের সব শক্তি প্রয়োগ করে ছেলেটাকে কয়টা থাপ্পড় দিলাম। এরই মধ্যে এক সিএনজি অটোরিকশাচালক এগিয়ে এসে ঘটনা কিছু বুঝতে পেরে বললেন_ 'এসব পোলাপানের লাইগা মা-বোনরে ঘর থেকে বের হইতে দিতে ভয় করে।' মেয়েটি তার সিদ্ধান্তে অটুট, কিছুতেই ছেলেটাকে যেতে দেবে না। আমি তার বড় ভাইকে ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বললাম। মেয়েটির ভাই এলো, সঙ্গে আরও কয়জন ছিল। আমার জরুরি কাজ থাকায় মেয়েটির ভাই সেখানে পেঁৗছার পর চলে এলাম। ইভ টিজিং, নারীর শ্লীলতাহানি ও নারী নির্যাতন এরকম অনেক ঘটনা শুনেছি। কিন্তু এরকম ঘটনা সামনাসামনি আর কোনোদিন পড়েনি। ভাবতে অবাক লাগছিল, আমাদের দেশের নারীরা কতটা অনিরাপদ। নারীদের নিরাপত্তায় আমরা কত দুর্বল। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে।
বেশিরভাগ নারী এমন পরিস্থিতিতে লজ্জায় কাউকে কিছু বলে না, প্রতিবাদ করে না। এতে এমন ছেলেদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে। স্যালুট সেই মেয়েটিকে, স্যালুট তার সাহসিকতাকে, স্যালুট তার মা-বাবাকে।
তার সেই প্রতিবাদ প্রমাণ করে সে ভালো পরিবারের মেয়ে। অবশ্যই সেই মা-বাবা আদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন তাদের মেয়েকে। আর ধিক্কার সেসব ছেলেদের, যারা রাস্তায় এমন কাজ করে। ধিক্কার সেসব মা-বাবাকে, যারা তাদের ছেলেকে কিছুই শিক্ষা দেন না, নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। যে কারণে ছেলে এমন কাজ করে বেড়ায়।
২৮ মে ২০১৩, সমকালের নারীস্থান পাতায় প্রকাশিত

No comments:
Post a Comment