Wednesday, April 22, 2015

অপরূপ দ্বীপ লাংকাউই

রফিকুল ইসলাম সাগর

কুয়ালালামপুরের পুডু বাসটার্মিনাল থেকে ৪৭ রিঙ্গিত (১ রিঙ্গিত = ২৬.৬৪ টাকা) দিয়ে বাসের টিকিট কিনে নিলাম। রাত ১২টায় কুয়ালা পারলিস ফেরিঘাটের উদ্দেশ্যে বাসটি যাত্রা শুরু করল। তিন ঘণ্টা চলার পর ২০ মিনিটের যাত্রাবিরতি। সে রাতে চাঁদ ছিল। চাঁদের আলোয় হারিয়ে যেতে বসেছিলাম। বাসের ভেঁপুতে ঘোর ভাঙল। তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে বসি। বাস আবার চলতে শুরু করে। বাসের ভেতরটা নীরব। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। এক সময় আলো ফুটতে শুরু করল। ভোরের সি্নগ্ধ আলোয় সুন্দর প্রকৃতি আরো সুন্দর হয়ে ধরা দিল। উঁচুনিচু পাহাড় আর সবুজে ঘেরা বনভূমির মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ। অবশেষে প্রায় ৯ ঘণ্টা পর ফেরিঘাটে পেঁৗছালাম। এখান থেকে লাংকাউই দ্বীপে যেতে লঞ্চে চড়তে হবে। ১৮ রিঙ্গিত দিয়ে লঞ্চের টিকিট কিনলাম। লঞ্চ ছাড়তে আরো ২০ মিনিট বাকি, ততক্ষণে নাশতা খেয়ে নিলাম। লঞ্চ ছাড়ার পর হঠাৎ ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেল। সমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে লঞ্চটি। ঢেউয়ের সঙ্গে দুলছে। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বারবার লাইফ জ্যাকেটের দিকে তাকাচ্ছিলাম। একটু পরে লঞ্চ আবার চলতে শুরু করলে ভয় কাটল। লাংকাউই যাওয়ার সময় লঞ্চ থাইল্যান্ডের সীমানা ঘেঁষে যায়। এক ঘণ্টা বিশ মিনিট লাগল দ্বীপে পেঁৗছাতে। সাধারণত ৫০ মিনিট লাগে। ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ৩০ মিনিট বেশি লেগেছে। লঞ্চ থেকে নেমে ঠিক করলাম মোটরসাইকেল ভাড়া করব। লাংকাউইতে ঘোরার জন্য অনেক রকম গাড়ি পাওয়া যায়। গাড়ি ভাড়া নিতে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে। কারণ গাড়ি নিজেকেই চালাতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স যেকোনো দেশের হলেই চলে। দিনপ্রতি ৩০ রিঙ্গিত দিয়ে একটি মোটরসাইকেল ভাড়া নিলাম। গাড়ি ভাড়া করে ঘুরলে ইচ্ছেমতো ঘোরা যায়, খরচও কম হয়। রওনা দিলাম পান্তাই চেনাং বিচের উদ্দেশে। পথ চিনতে বেগ পেতে হয় না।
পান্তাই চেনাং গিয়ে হোটেলে রুম নিলাম, প্রতিদিন ৮০ রিঙ্গিত। রুমে সব কিছু রেখে আর দেরি করলাম না। সমুদ্র যে ডাকছিল! দূরে একটি লাল পতাকা দেখতে পেলাম। বুঝলাম বিপদসংকেত চলছে। তাই বেশিদূর গেলাম না। তবু কোনো দিক দিয়ে যে দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেল! লাঞ্চ শেষ করে রুমে এলাম একটু জিরোতে। তবে বিছানায় গিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সৈকতে গিয়ে খালি পায়ে বালুতে হাঁটলাম। রাতের খাবার খেয়ে লাংকাউই বিমানবন্দরের পাশে গিয়ে বসলাম। বিমানের ওঠানামা দেখতে খুব ভালো লাগল। রুমে ফিরে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘুম দিলাম। পরদিন প্রথম গেলাম কেব্ল্কার চড়তে। তবে পথে একটি হেলিকপ্টার দেখে চড়ার ইচ্ছে জাগল। জানতে পারলাম তিনজনের খরচ ৪০০ রিঙ্গিত। এই সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। ৮ মিনিট হেলিকপ্টারে চড়ে আকাশ থেকে সমুদ্র দেখলাম। ছোট ছোট দ্বীপও ঘুরে এলাম।
লাংকাউইর বড় আকর্ষণ কেব্ল্কার। সেখানে যাওয়ার পথটাও সুন্দর। একদিকে উঁচু পাহাড় আর অন্যদিকে বিস্তৃত সমুদ্র। কেব্ল্কারের মূল গেটের সামনে মোটরসাইকেল পার্ক করলাম। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখি অনেক দোকানপাট। কেব্ল্কারের টিকিটের দাম ৩০ রিঙ্গিত। লাইনে দাঁড়িয়ে একজন একজন করে উঠে গেলাম। গাছগাছালি আর পাহাড়েরও ওপরে উঠে গেলাম আমরা। অবশেষে ৭০০ মিটার উঁচুতে গিয়ে কেব্ল্কার থেকে নামলাম। সেখানে আছে স্কাই ব্রিজ। স্কাই ব্রিজ থেকে সমুদ্র দেখা দারুণ অভিজ্ঞতা। আশপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। সবুজের ছড়াছড়ি। নিচে নামলাম আরেকটি কেব্ল্কারে করে। বের হয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে একটি পাহাড়ি ঝরনা দেখতে গেলাম। আঁকাবাঁকা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হলো অনেকটা পথ। জলের ধারায় অনেক পর্যটক গা ভেজাচ্ছে। ঝরনা দেখে আমরা অজানার পথে ছুটলাম। মোটরসাইকেলের গতি ১৫০-এর কাঁটা ছুঁইছুঁই। ফাঁকা রাস্তা। পথের পাশে বিস্তীর্ণ জলরাশি। ছবির মতো সব দৃশ্য। পাহাড়ের মাঝে মাঝে গভীর খাদগুলোর দিকে তাকালে গা শিউরে ওঠে। এরই মধ্যে বিকেল হয়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে খাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। পথের এক প্রান্তে সমুদ্রের পাশে একটি খাবার হোটেলে সবাই থামলাম। সি-ফুড খেয়ে কাছের সৈকতে গেলাম। অনেক পাথর আর প্রবাল দেখতে পেলাম। মধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে উঠল। সূর্যটিকে মনে হচ্ছে আগুনে ঝলসানো লাল থালা। অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম। চারদিক অন্ধকার হয়ে এলে ফিরতে থাকলাম পান্তাই চেনাং।
পরদিন সকালে নাশতা করে কেনাকাটা করতে গেলাম। এখানে অনেক ডিউটি ফ্রি শপ আছে। এই দোকানগুলোতে খুব কমদামে জিনিসপত্র পাওয়া যায়। লাংকাউইতে খাবারের দামও কম। শপিং শেষ করে হোটেলে ফিরে এলাম। রুম ছাড়লাম দুপুর ২টায়। সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে হোটেল রিসিপশনে রুমের চাবি বুঝিয়ে দিলাম আর মোটরসাইকেলের চাবি ফেরত দিলাম ফেরিঘাটে। প্রকৃতিকে ছেড়ে আসতে খারাপই লাগছিল; কিন্তু কী করা?

ভিসা পেতে
মালয়েশিয়ার ভ্রমণ-ভিসা পেতে সময় লাগে তিন কার্যদিবস। ভ্রমণ-ভিসা পেতে মালয়েশিয়া হাইকমিশনে যেতে হয় না। নির্ধারিত ট্রাভেল এজেন্সিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট, বিমান টিকিট, ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার লেনদেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, চাকরিরত হলে প্রতিষ্ঠানের অনুমতিপত্র, ব্যবসা করলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, ছাত্র হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতিপত্র ইত্যাদি জমা দিতে হবে। এর জন্য ট্রাভেল এজেন্সিকে ভিসা ফিসহ দিতে হবে এক থেকে দুই হাজার টাকা।
ছবি : লেখক

কিভাবে যাবেনঢাকা-কুয়ালালামপুর ফ্লাইট আছে প্রতিদিন। যাওয়া-আসা বিমান ভাড়া মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস: ৪৫ হাজার টাকা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস: ৪৩ হাজার টাকা, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস:
৩২ হাজার টাকা।


দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত (১৮ মার্চ ২০১৩, বেড়ানো পাতায়)

No comments:

Post a Comment