Wednesday, April 22, 2015

একটি ছবির পেছনের গল্প

রফিকুল ইসলাম সাগর

ছবিতে দুজন ব্যক্তি মহাখালীর একটি নোংরা ঝিলের পানিতে গরুর নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করছে। প্রতিদিন খুব ভোরে তাদের এখানে এভাবেই নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করতে দেখা যায়। লক্ষ্য করেছি, সকালে লোক সমাগম হওয়ার আগে আগেই তাদের ধোয়ার কাজ শেষ হয়ে যায়। প্রথম প্রথম মনে করতাম এগুলো ধুয়ে তারাই হয়তো খায়। মনের কৌতূহল মেটাতে খোঁজখবর নিয়ে মিলল অন্যরকম উত্তর। এ দুজন মহাখালীর একটি বস্তিতে থাকে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের আগের সময়টাতে তারা যায় মহাখালী বাজারের কসাইখানায়। সেখানে গরু জবাই হওয়ার পর তারা কসাইদের কাজে সাহায্য করে। পানি এনে দেয়া, ঝাড়ু দিয়ে রক্ত পরিষ্কার করা, অবশেষে কসাইখানা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা তাদের কাজ। বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসেবে তারা পায় গরুর নাড়িভুঁড়ি। এ নাড়িভুঁড়ি তারা ঝিলের নোংরা পানিতে পরিষ্কার করে ধুয়ে প্রতিদিন আশপাশের নির্দিষ্ট কয়েকটি হোটেল এবং পথের হালিমের দোকানে বিক্রি করে বলে কিছু বস্তিবাসী জানিয়েছে। রোববার বাদে এটা তাদের নিত্যদিনের ব্যবসা বলে খোঁজখবর নিয়েছি। এ নাড়িভুঁড়িই যখন খাবারের জন্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় তখন দেখে কি বোঝার উপায় আছে_ এটা কোথা থেকে কীভাবে এসেছে।

আমরা আশপাশের হোটেল অথবা রেস্টুরেন্টে জীবনের প্রয়োজনে কখনও কখনও খেতে যাই। কারও কারও প্রতিদিন হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে হয়। এছাড়া পথ-ঘাটে এখানে-সেখানে বাইরের খোলা কত খাবারই তো আমরা খাই। এসব খাবার আগে-পরে আমাদের অনেকের মনে হরেক রকমের প্রশ্ন জাগে। খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, খাবারটি কোথায় রান্না হয়েছে, কীভাবে রান্না হয়েছে, কী দিয়ে রান্না হয়েছে, কোন পানিতে ধোয়া হয়েছে_ এ রকম নানান প্রশ্ন। সব প্রশ্নের উত্তর সব সময় মেলে না। অনেক ক্ষেত্রে একান্তেই প্রশ্ন জাগে। আবার একান্তেই মনকে কোনো রকমের বুঝ দিয়ে খেয়ে নিই, যা হওয়ার হবে_ এমন ভেবে খেয়ে নেয়ার মতো সাহস অনেক মানুষের মাঝেই নেই।

বাইরের খোলা খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন যতই উঠুক তারপরও আমরা থেমে নেই। সমাজে সবাই একশ্রেণীর মানুষ নয়। কিছু শ্রেণীর মানুষের বাইরের খোলামেলা খাবারই ভরসা। তাছাড়া এসব খোলা খাবারের মান যাচাই-বাছাই করার জন্য কেউ নেই। নেই কোনো বিধিনিষেধ। তাই যে যা ইচ্ছে তা খাওয়াচ্ছে। আর আমরাও খাচ্ছি।

- See more at: http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2014/11/15/107050#sthash.N19PvHno.dpuf

আলোকিত বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত (১৪ নভেম্বর, ২০১৪ ২১:৩৬:৫৯)

No comments:

Post a Comment