Wednesday, April 22, 2015

মালয়েশিয়ার বাংলা মার্কেট

রফিকুল ইসলাম সাগর 
সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লক্ষ লক্ষ বাঙালি। এই সব প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিদেশী দেশ গুলোতে আছে বাংলা মার্কেট। অনান্য দেশের মতো মালয়েশিয়ার কুয়ালালামুরের জালান সিলাংযে বাংলা মার্কেট। এই বাংলা মার্কেট কোতারায়া নামেও পরিচিত। বলা যায় এই এলাকা মালয়েশিয়ার সব চেয়ে ব্যস্ততম বানিজ্যিক শহরের মধ্যে একটি। কোতারায়া বাংলা মার্কেটের পাশেই মালয়েশিয়ার জাতীয় পোস্ট অফিস,চায়না টাউন,স্বাধীনতা মাঠ,সেন্ট্রাল মার্কেট, কে এল টাওয়ার,মসজিদ ইন্ডিয়া,পাসার সিনি এল আর টি (মেট্রো রেল) স্টেশন,দূর পাল্লার ট্রেন (কে টি এম ) স্টেশন এবং মালয়েশিয়ার বিহত্তম একটি পুডু বাস টার্মিনাল। দিন রাত ২৪ ঘন্টা এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ করা যায়
কোতারায়া অথবা বাংলা মার্কেট প্রকৃত অর্থে বাঙালি পাড়া। ভারতীয় বাঙালি এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের মানুষের সংখ্যাও অনেক। এছাড়া কোতারায়াতে দেখা যায় পাকিস্তানি, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিনিদের। 
কোতারায়া যেন ঢাকার গুলিস্থান অথবা নিউ মার্কেট। সারাদিন বাঙালিদের ভীড়। সকাল ১০টায় দোকানপাট খুলতে থাকে এবং রাত পর্যন্ত চলে স্বাভাবিক কাজকর্ম। বিকাল হলে ব্যবসার পাশাপাশি জমে ওঠে আড্ডা। আড্ডায় অন্য কোনো এশীয়কে তেমন দেখা যায় না। কারণ আড্ডাবাজিতে ৯০ শতাংশ বাংলাদেশি আর ১০ শতাংশ বা আরও কম ভারতীয় ও পাকিস্তানি, যারা আসে বন্ধুত্বের টানে।
বাংলাভাষা ও বাঙালি এক মৈত্রীর কারণে আবদ্ধ করেছে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানিদের। এখানকার দোকানগুলোতে নেপালি ও মায়ানমারের মানুষের দেখা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের আড্ডার মতো এখানেও চলে রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, উন্নয়ন, এনজিও সুশীল সমাজ নিয়ে নানা মতামত, তর্ক আলোচনা। বাংলা  মার্কেটে খাবার হোটেল,ট্রাভেল এজেন্সি,মোবাইল,ইলেকট্রনিক্স,মু দি-স্টেশনারি,সেলুন সহ সর্বমোট প্রায় ৫০ টির মতো বাংলা দোকান আছে।  এছাড়া আছে ন্যাশনাল ব্যাংক লি: এর একটি শাখা। বাংলা মার্কেটে বাংলাদেশি সব পণ্য পাওয়া যায়। মূলত খাবার হোটেল ও দোকান গুলোকে ঘিরে জমে ওঠে আড্ডা। ব্যবসাও জমজমাট। প্রতিদিন লক্ষ করা যায় উপচে পড়া ক্রেতার ভীর। বিশেষ করে ছুটির দিন গুলোতে ভীর চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিনে এবং মাসের প্রথম দিকে বেচা-কেনা হয় সব চেয়ে বেশি। অনান্য জায়গায় দামদর করে পণ্য কেনা-বেচার দৃশ্য চোখে পড়ে না, শুধূ মাত্র কোতারায়া বাংলা মার্কেট,চায়না টাউন দামদর করে পণ্য কেনা বেচা হয়। কোতারায়াতে বাংলাদেশি সব মোবাইল কোম্পানির সিমকার্ড ও ইন্টারনেট মডেম পাওয়া যায়। সিডির দোকান গুলোতে সারাদিন উচ্চ সুরে বাজতে থাকে বাংলা গান। কোনো কোনো দোকানের টিভিতে বাংলা সিনেমা,নাটক ও কৌতুক প্রচারিত হতে দেখা যায়। দেখা যায় সেই দোকান গুলোর সামনে অনেকে দাড়িয়ে টিভির দিকে চেয়ে আছেন। খাবার দোকানে এতটাই ভীর থাকে যে আসনে বসতে হলে লাইন ধরতে হয়। প্রতিটি দোকানের সামনে দিয়ে হেটে গেলে শুনতে পাওয়া যায়----আসেন ভাই ভিতরে আসেন/ কী লাগবো ভাই?/ পুরান ঢাকার বিরিয়ানি আছে,নান রুটি আছে এরকম টাইপের কথাবার্তা। সব মিলিয়ে প্রবাসে যেন এক খন্ড বাংলাদেশ। বেশির ভাগ বাঙালি এখান থেকে দেশে টাকা পাঠান। এখান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নাম্বারেও টাকা পাঠানো হয়। দোকানের মালিক বাঙালি, পরিচালক বা পরিচারিকা বাঙালি এবং ভোক্তা বাঙালি সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় আরেক বাংলাদেশ। 

বাংলা মার্কেটের দোকান গুলোতে কাজ করে যারা তারা সবাই বাঙালি। খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি বাঙালি মালিকের কাছে কাজ করলে বেতন কম। এখানে যারা কাজ করে তারা কেউ বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট না। দোকান পরিচালক মালিক তার গ্রামের লোক অথবা আত্বীয় স্বজনদের এনে এখানে কাজ দিয়েছেন। ইচ্ছে থাকা সত্যেও সম্পর্কের খাতিরে কম বেতন পেয়েও এখানকার কর্মীরা কাজ ছেড়ে যাচ্ছেন না। লক্ষ্য করেছি মালয়েশিয়ার অনন্য খাবার দোকানের চেয়ে বাংলা মার্কেটের খাবারের দাম বেশি। এছাড়া ভিতরের পরিবেশ আমাদের দেশের মতই। বাংলা মার্কেট থেকে বাঙালি ক্রেতারা পণ্য ক্রয় করতে পছন্দ করেন। বিশ্বাস করেন। প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো কিনতে বিক্রেতাকে সহজেই বুঝানো যায়। বাংলা মার্কেটে যারা কাজ করে তাদের একদিক থেকে সুবিধা আছে ভাষার কোনো সমস্যা নেই কারণ এখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশী ক্রেতা। সহজেই কথা বলা যায়, বুঝানো যায়। এছাড়া নিজের দেশের মানুষদের দেখা যায় সর্বক্ষণ। সবার মাঝে সহজেই সময় কেটে যায়। 
মালয়েশিয়া প্রবাসী এমন অসংখ্য বাঙালি আছেন যারা বাংলা মার্কেট অথবা কোতারায়া ছাড়া অন্য কোনো জায়গা চিনেন না

দৈনিক নয়া দিগন্ত রবিবারের ম্যাগাজিন অবকাশে প্রকাশিত (২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

No comments:

Post a Comment