Friday, May 15, 2015

খোয়াব!

রফিকুল ইসলাম সাগর 
আনলিমিটেড চিন্তা-ভাবনা সারাদিন মাথার ভিতরে দৌড়ায়। আমাকে শান্তি দেয় না। দিনের আলোতেই জেগে জেগে দেখি স্বপ্ন। আর রাতের আধারের গভীরতা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তো স্বপ্নের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। আজব যতসব স্বপ্ন দেখি আমি। তবে স্বপ্ন দেখায় অন্য রকম শান্তি আছে। স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলে মানুষের জীবনের আনন্দও সব শেষ। স্বপ্ন হাসায়, কাদায় আবার ভাবায়।

কিছুদিন আগে স্বপ্নে দেখি আমি একটা লাল গাড়ি কিনেছি। কোনো এক হরতালের দিনে লাল গাড়িটি নিয়ে রাস্তায় বের হই। একটি সরকারী কলেজের সামনে গাড়িটি রেখে চা পান করতে গিয়েছিলাম। রাস্তার বিপরীত পাশের চায়ের দোকানে দাড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলাম আর গাড়িটির দিকে দৃষ্টি দিচ্ছিলাম। এমন সময় দেখতে পাই আমার নতুন গাড়িটির সামনের, পিছনের ও জানালার গ্লাস ভাঙ্গছে হরতাল সমর্থনকারীরা। যারা ভাঙ্গছে তারা আমার পরিচিত। আমি রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে এই দৃশ্য দেখে মনে মনে বলছিলাম, ভাং ভাং তোদের তো চিনেই ফেলেছি। তোদের নেতাদের কাছে বিচার দিয়ে জরিমানা আদায় করব দেখিস। এর মধ্যেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুই করা হলো না।

পরেরদিন গভীর রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর স্বপ্নে দেখি, আমি তিন কোটি টাকা পেয়েছি। এতো টাকা পেয়ে বিশাল ঝামেলা হয়ে যায়। কি করা যায় এতো টাকা দিয়ে সেই ঝামেলা। প্রথমেই একটি গাড়ি আর একটি মোটর সাইকেল কিনি। বাকী থাকে দুই কোটি পঁচিশ লক্ষ টাকা। এই টাকায় কি করা যায় বুদ্ধি নিতে একজন উপদেষ্টার কাছে যাই। তিনি বললেন, অবৈধ ব্যবসা শুরু করেন। আমিও রাজি। উপদেষ্টার ওখান থেকে বের হয়ে দেখি আমার গাড়ি নাই। চুরি হয়ে গেছে। গাড়ি খুজতে খুজতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। 

দুইটা মোবাইল অফ করে ঘুমাতে যাই বিছানায়। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা অবস্থায় বারবার মনে হচ্ছিল আমার মোবাইলের রিং বাজছে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি মোবাইল তো বন্ধ। এভাবে করতে করতে ঘুমিয়ে যাই। এবার স্বপ্নে আমার মোবাইলের রিং বাজছে......অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করে বললাম, হ্যালো কে বলছেন? অপরপ্রান্ত থেকে ভারী কন্ঠে একজন বললেন, আরে আমারে চিনতে পারলেন না? আমি নায়ক কাতুকুতু বলছি।
-তা কাতুকুতু ভাই, আমাকে কি কারণে ফোন করেছেন?
-আপনাদের পত্রিকায় ছাপানোর জন্য আমার একটা লেখা পাঠিয়েছি।
-বলেন কি আপনি আবার লেখালেখিও করেন নাকি।
-আরে আপনি জানেন না? আমি নায়ক, লেখক, পরিচালক এবং প্রযোজক। 
আচ্ছা ঠিক আছে কাতুকুতু ভাই আপনার লেখাটা দেখব ভাব নিয়ে কথাটা বলে লাইন কেটে দিলাম। ঘটনা শেষ না হয়েই ঘুম ভাঙ্গলো। উঠে স্বপ্নে নয় বাস্তবে ল্যাপটপ অন করলাম। মেইল চেক করে দেখি নায়ক কাতুকুতুর কোনো লেখা আসেনি। আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

এক পাগল আমারে দেইখা বলছিল আগের জন্মে আমি নাকি জমিদার আছিলাম। তবে খালি ঘুমাই, খাই আর টো টো করি বইল্লা আমার আম্মাজান আমারে এই জনমেই জমিদার কয়। তার সাথে আমার প্রিয়াও টিটকারী মাইরা কয় আমি নাকি জমিদার। আমি যে কি তা শুধু বুজছে আমগো দুই রাজনৈতিক নেত্রী। এই তো সেদিন তারা দুইজনই আলাদা আলাদা ভাবে স্বপ্নে আমার সাথে দেখা করতে আসে। দুই জনেই আমার কাছে পরামর্শ চাইল, আগামী ইলেকশনে বেশি ভোট পামু ক্যামনে? আমি দুই জনরেই একই পরামর্শ দিলাম, আপনারা জনগনরে আশ্বাস দিতে থাকেন। পাল্টাপাল্টি যে বেশি আশ্বাস দিতে পারবেন ভোট সেই বেশি পাবেন। এরকম পরামর্শ পাইয়া দুই নেত্রীই খুশি হয়ে আমারে প্রস্তাব দিয়েছিল, আপনি নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান হয়ে যান। আমি কইছিলাম, ভেবে বলব। ভাবতে ভাবতে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল।

শুধু রাতেই নয় দিনেও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার কঠিন ব্যাধি আমার। ভাবতে ভাবতে এমন গভীরে চলে যাই যে হাওর-বাওর, বান্দরবান, সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, কুয়াকাটা, কক্স-বাজার সহ শেষ ছেড়ে বিদেশে গোয়া, বালি, পাতায়া, লাংকাউই, ব্রাজিল, আমেরিকাতেও চলে যাই। মাঝে মাঝে পশু-পাখির সাথেও কথা বলি। 
গত ঈদে কুরবানী দেয়ার জন্য আমাদের কেনা লাল গরুটার খুব মন খারাপ। গরুর মুখখানি দেখে আমার খুব মায়া লাগলো। দুই চোখের কোনে পানি জমে আছে। আমি বললাম, কিরে লালু তোর মন খারাপ কেন? 
-আমার মনের গরুর জন্যে।
-বলিস কি তোরো আবার মনের গরু আছে নাকি।
-মানুষের যেমন মনের মানুষ থাকে আমাদেরও তেমন মনের গরু। আমার মনের গরুরে ছাড়া আমার ভালো লাগতাছে না। 
-কি আর করবি বল? সবই তোর ভাগ্য। 
-আমার মনের গরুরে আইন্না দেন নাইলে আমি আমার গলায় বান্ধা দড়ির সাথে ফাস দিয়া মইরা যামু, কাদো কাদো কন্ঠে বলল গরু। আমি বললাম, তুই জানিস না? আত্মহত্যা মহাপাপ।
-এতো কিছু জাইনাও মানুষ যদি এই কাজ করতে পারে তাইলে আমি ক্যান পারুম না? আমি তো আর মানুষ না আমি 'গরু'। মানুষ কতো লেখাপড়া করে তারপরেও অবৈধ টাকায় কুরবানী দেয়। এটা পাপ না? এই জালিম দুনিয়ায় আমি থাকুম না। 

গরুর এইসব কথা শুনে আমি চুপ খেয়ে গেলাম। ঠিকই তো বলেছে। 



No comments:

Post a Comment