রফিকুল ইসলাম সাগর
বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন বৈধ-অবৈধ উপায়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছে/যাওয়ার চেষ্টা করছে। কী আছে মালয়েশিয়াতে? মালয়েশিয়া যেন আছে সোনার হরিন। ক'বছর আগেও আমাদের দেশের মানুষের মালয়েশিয়া যাওয়ার তেমন আগ্রহ ছিল না, মালয়েশিয়া অনেকেই যেতে চাইতো না। কিন্তু বর্তমানে এমন অবস্থা যেভাবেই হোক মালয়েশিয়া যেতেই হবে। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া এয়ার লাইন্সে কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে প্রায় ২০ জন বাংলাদেশীকে পুলিশের বিশেষ পাহারায় অপেক্ষা করতে লক্ষ্য করি। তারা সবাই ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী। বিমান বন্দরে আগত সবাই ভিন্ন চোখে তাদের দিকে তাকাচ্ছিল কারণ সেই ২০ জনের সাথে ছিল মালয়েশিয়ান পুলিশ। আমার মনে কৌতুহল সৃষ্টি হল জানার কী করেছে তারা। কোনো না কোন অপরাধ তো তাদের আছে যে কারণে পুলিশ তাদের সাথে অবস্থান করছে। জানতে পেরেছিলাম সেই ২০ জন ভ্রমন ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, মালয়েশিয়া বিমান বন্দর পুলিশ তাদের জেরা করে বুঝতে পারে তারা প্রকিত পর্যটক নয়। মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে পারলেই অবৈধ ভাবে মালয়েশিয়া থেকে যাবে তারা সবাই, এই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। ভাগ্য খারাপ থাকায় তাদের একজনও মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে পারেনি। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের কথা-বার্তা ও পোশাক দেখে সন্তুষ্ট হয়নি বলে তাদের মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে দেয়নি। সেদিন রাতেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভ্রমন ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে হলে ফিরতি বিমান টিকেট থাকা বাধ্যতামূলক। যদি ইমিগ্রেশন পুলিশ সন্তুষ্ট না হয় তাহলে সেই ফিরতি টিকেট দিয়েই দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে যতবার মালয়েশিয়া যাওয়া-আসা করেছি প্রতিবারই এমন কোনো দৃশ্য দেখতে হয়েছে। আগে একবার চোখে পরেছে কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে প্রায় ৩০ জন বাঙালিকে মেঝেতে বসিয়ে রেখেছে পুলিশ তখন তাদের সাথে কিছু সংখ্যক নাইজেরিয়ানও ছিল।
আমার সাথে সেই ২০ জন একই বিমানে উঠে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম মালয়েশিয়া প্রবেশের জন্য দালালকে জনপ্রতি দুই লক্ষ টাকা দিয়েছে সবাই। মালয়েশিয়া প্রবেশের পর সেই দালালের আরেক সহযোগী মিজান (মালয়েশিয়া অবস্থানরত) সবাইকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে এমন চুক্তি হয়েছিল। আপনাদের যে মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এখন আপনারা কী করবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল,হাসেম ও সালাম বলেন দালালের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়েছে দালাল বলেছে কিছুদিন পর তাদের আবার পাঠানো হবে। এদের মধ্যে এমন কিছু লোক ছিল যারা পূর্বে মালয়েশিয়া অনেক বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে গিয়েছিল। মুমিন নামের একজন বলল এর আগে সে ১১ বছর মালয়েশিয়া ছিল। বাংলাদেশ ফিরে গিয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরোপুরি হতাশ হয়ে আবার মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কেউ কেউ
পুরোপুরি নতুন এই প্রথম মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছে। বিদেশ যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকে জানালেন দেশে কী করমু, দেশে করার মত কাম নাই, দেশে কাম কইরা আর কত কামামু। বিমান ছাড়াও সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাচ্ছে অনেকে। এখন পত্র-পত্রিকার আলোচিত খবর 'টলারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে টলার ডুবে নিহত হয়েছে বাংলাদেশী'।
এভাবে ভ্রমন ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া প্রবেশ করার সময় প্রতিদিনই অনেক বাংলাদেশীকে মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে না দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যারা প্রবেশ করতে পারছে তারা মালয়েশিয়া গিয়েই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। এই সব বাংলাদেশীদের কারণে আজ বিদেশীরা আমাদের খারাপ চোখে দেখে। এদের কারণে শুধু মালয়েশিয়া নয় বিশ্বের প্রায় সব দেশে শুধু মাত্র বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা পাওয়া সহ সব ধরনের নীতিমালা কঠিনের চেয়েও কঠিন হচ্ছে। প্রকিত পর্যটকরাও বিদেশীদেশ গুলোতে যেতে ট্যুরিস্ট ভিসা পাচ্ছেন না। যারা পাচ্ছেন, জমা দিতে হচ্ছে প্রয়োজনের অধিক কাগজপত্র, তার সাথে জমা রাখতে হয় মোটা অংকের জামানত।
দেশের মানুষ বেকারত্ব,জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই অনেকের টার্গেট এখন বিদেশ যাওয়া। জীবনের ঝুকি নিয়ে অনেকেই প্রতিদিন মালয়েশিয়া সহ অনান্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কেউ যেতে পারছে, কেউ পারছে না। দালালের প্রভলনে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে অনেকে। বর্তমানে বাংলাদেশীরা মালয়েশিয়া যাচ্ছে বেশি। ওয়ার্ক ভিসা বন্ধ থাকায় ভ্রমন ভিসায় মালয়েশিয়া প্রবেশ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে অনেকে।
ছবি: লেখক
(৩১ জুলাই ২০১৩) দৈনিক বর্তমানে প্রকাশিত

No comments:
Post a Comment