Wednesday, October 14, 2015

স্কুল জীবনের স্মৃতি

রফিকুল ইসলাম সাগর

ক্লাস এইটে পড়ি। আমাদের ক্লাসের ইংলিশ স্যার (সুব্রত বড়ুয়া) ক্লাস চলাকালীন সময় প্রায়ই আমাদের উপর রেগে গিয়ে যে কথাগুলো বলতেন তা হলো, ‘এখন তোদের চোখে রঙিন চশমা তাই সব কিছুই রঙিন লাগে। সব কিছুই সুন্দর লাগে। একদিন চোখের এই রঙিন চশমা খুলে যাবে। সব রঙিন স্বপ্ন সাদাকালো হয়ে যাবে।’ কথাগুলো তিনি বলতেন যখন আমরা পড়া পারতাম না। পড়া লেখা না করলে সব রঙিন স্বপ্নই সাদাকালো হয়ে যাবে তিনি তাই আমাদের বুঝাতেন।
তিনি বলতেন, ‘তোদের এখন যে বয়স এটা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। একদিন এই দিনের জন্য আফসোস করবি। তোদের বাবা-মা কত কষ্ট করে তোদের লেখাপড়া করতে পাঠায়। হেলাফেলায় সময় নষ্ট করিস না।’ স্যারের সেই কথাগুলো খুব মনে পড়ে। বছর চারেক আগে আমাদের সেই স্যার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। সেদিন আমরা স্কুলের অনেক বন্ধু স্কুলে গিয়েছিলাম। স্মৃতিচারণ করেছিলাম স্কুল জীবনের অনেক কথা।
আমি প্রচুর স্কুল ফাকি দিতাম। স্কুলে গেলে সব সময় বসতাম লাস্ট বেঞ্চে। পরীক্ষায় পাস করতাম কোনো রকমে টেনেটুনে। যখন রেজাল্ট কার্ড পেতাম সেটা বাড়িতে দেখানো নিয়ে করতাম নানা তালবাহানা। কাউকে না দেখিয়েই স্কুলে জমা দিয়ে দিতাম। আম্মার স্বাক্ষর নকল করতাম। নিজেই রেজাল্ট কার্ডে স্বাক্ষর করে দিতাম। কত মধুর ছিল সেই স্মৃতিগুলো।
আমাদের স্কুলের আরেক শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ মুন্সী স্যার। তিনি ছিলেন ক্লাস এইটে আমাদের শ্রেণী শিক্ষক (অংক)। তার সাথে আমার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। অনেক ছাত্রেরই প্রিয় শিক্ষক ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন অংকে স্কুলের সেরা শিক্ষক। আমি তার বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়তাম। স্যার কেন জানি ‘মামা’ শব্দটাকে খুব অপছন্দ করতেন। মামা শব্দটা শুনলে খুব খেপতেন। আর তাই স্কুলে, রাস্তায় অনেক ছাত্ররাই স্যারকে মামা বলে খেপাত। পেছন থেকে ‘ওই মামা’ বলে ছাত্ররা লুকিয়ে পরত। স্যার তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেত না। আবার অনেক সময় কেউ কেউ স্যারের কাছে ধরা পড়েও যেত। যে ধরা পরত তার উত্তম-মাধ্যম খাওয়া তো মিস ছিল না। একদিন আমি স্যারের সাথে রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছি। তখন একটা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে শব্দ শোনা গেল মামা... ওই মামা... মামা....। স্যারের সাথে আমিও উপরের দিকে তাকিয়ে চেহারা স্পষ্ট দেখার আগেই দেখলাম দু’জন লুকিয়ে পড়েছে। স্যার আমাকে বললেন, চিনতে পেরেছিস? আমি বললাম, না স্যার। আবার দু’জন হাঁটা শুরু করি। ওরা আবার শুরু করল, ওই মামা... মামা...। আমার তো হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হওয়ার দশা কিন্তু জোর করে হাসি চেপে রাখলাম নয়তো সে মুহূর্তে ওদের রাগ স্যার আমার ওপরই মেটাতেন।
আরেক দিন সকালের ঘটনা। আমি আর স্যার একটি হোটেলে নাস্তা খেতে বসেছি। হোটেলের ওয়েটাররা তো সবাইকে সাধারণত মামা বলেই ডাকে। তো ওয়েটার বলল, মামা কী খাইবেন? সাথে সাথে স্যার উঠে দাঁড়ালেন। আর ওয়েটারের গালে কশিয়ে চর বসিয়ে দিয়ে বললেন, আমাকে মামা বললি কেন? সেই মুহূর্তে আমি স্যারকে থামিয়ে দিয়ে তার গরম মাথা ঠাণ্ডা করলাম। তারপর থেকে সেই ওয়েটারও রাস্তায় স্যারকে দেখলে মামা বলে পালিয়ে যেত। এমন অসংখ্য খণ্ড খণ্ড স্মৃতি প্রায়ই হাসায়, ভাবায়, কাদায়।

No comments:

Post a Comment