Sunday, January 24, 2016

যখন প্রথম দেশে রেমিট্যান্স পাঠাই

রফিকুল ইসলাম সাগর

বিদেশ থেকে প্রবাসীদের আয় করা বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে দেশে পাঠানোকে রেমিট্যান্স বলে। রেমিট্যান্স শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রবাসীদের প্রেরিত আয়। বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ।

বৈধভাবে প্রবাসীদের পাঠানো আয় সেটা যে দেশ থেকে পাঠানো হয় সে দেশের মুদ্রা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট হয়ে আসে। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে রেমিট্যান্স অনেক বড় ভূমিকা রাখে। অনেক প্রবাসী অবৈধভাবে দেশে তাদের আয় পাঠান। যাকে বলে, 'হুন্ডি'। এ ধরনের আদান-প্রদান হয় ব্যক্তিগতভাবে। অধিকাংশ প্রবাসী সময় বাঁচাতে হুন্ডি করে দেশে টাকা পাঠান। এর মধ্যে এক শ্রেণীর প্রবাসী অবৈধভাবে বিদেশে থাকেন। তারা অবৈধভাবে হুন্ডি করে মুদ্রা পাঠান। আরেক শ্রেণীর প্রবাসীর কাছে হুন্ডি করে পাঠানো সহজ মনে হয়। তবে কারণ যাই হোক, হুন্ডির মাধ্যমে আদান-প্রদানে দেশের ক্ষতি। আমার প্রবাসী হওয়ার শুরুতে জীবনের প্রথম যেদিন নিজের পরিশ্রমে অর্জিত আয়ের কিছু অংশ দেশে বাবার কাছে পাঠিয়েছিলাম ২০১১ সালে। সে অনুভূতিটা ছিল অন্য রকম। কী যে এক তৃপ্তি পেয়েছিলাম! সেটা ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় এক আনন্দময় মুহূর্ত। জীবনে অনেক রকম আনন্দের স্বাদই তো অনুভব করেছিলাম। তখন মনে হয়েছে, যেন এ রকম একটা আনন্দ অনুভব করাই বাকি ছিল। প্রথম রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখলাম। ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে সে মুহূর্তে বাবা মনে হয় ভেবেছিলেন_ ছেলে আমার আর অকর্মা নেই। মনে মনে বাবাও খুব আনন্দ পেয়েছিলেন এবং আমাকে নিয়ে গর্ব হয়েছিল তার। একজনের কাছে শুনেছিলাম, আমার পাঠানো টাকা পাওয়ার পর বাবা কয়েকদিন তার বন্ধুদের কাছে ছেলের টাকা পাঠানোর গল্প শুনিয়েছেন। এ কথা শুনে দারুণ রকমের ভালো লাগা থেকে নিজের অজান্তেই আমার চোখে জল এসেছিল। আমি জানি, আমার মা-বাবা সেদিন টাকা পাওয়ার চেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছিলেন আমি কিছু করছি বলে। আমাকে নিয়ে অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছিলেন। সম্ভবত এমন অনুভূতি বিশ্বের সব প্রবাসীর পাঠানো টাকা পাওয়া মা-বাবার। 

1 comment: