Sunday, January 24, 2016

মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অল্প কথা

রফিকুল ইসলাম সাগর 

মুক্তিযুদ্ধের গল্প, সে সময়কার তোলা পুরনো ছবি অথবা ভিডিও চিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্পের বই বরাবরই আমাকে প্রচণ্ড আকর্ষণ করে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি। সে সময়ের ১৬ বছর পরে আমার জন্ম। আমার ঘনিষ্ঠ মুরব্বিজন যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, যুদ্ধ করেছেন সুযোগ পেলেই তাদের কাছ থেকে যুদ্ধের গল্প শুনতে বসে পড়ি। শোনার ফাঁকে ফাঁকে তাদের নানান রকমের প্রশ্ন করি। এতে যিনি গল্প বলেন তিনি শুনিয়ে আনন্দ পান আর আমি অজানা অনেক কিছু জানতে পারি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের গল্প, যুদ্ধ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এরপরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী সময়ের গল্প সব মিলিয়ে সে সময়ে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু জানার চরম কৌতূহল আমার। এসব গল্প আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনি। শুধু তাই নয়, শোনার সময় সে মুহূর্ত আমি যেন বাস্তবে অনুভব করি। শোনা ঘটনাগুলোর চিত্র আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। খুব আফসোস হয় আমার আমি কেন তখন ছিলাম না। আমি কেন যুদ্ধ করলাম না।
এক কথায় স্বাধীনতা আমাদের অনেক বড় অর্জন। মুক্তিযোদ্ধারা অসম্ভবকে সম্ভব করে বিশ্বের মানচিত্রে লিখেছিলেন বাংলাদেশের নাম। সেই সাথে বিশ্ব জেনেছে বাঙালিরা কত শক্তিশালী। বাঙালি দুর্বল নয়। বাঙালি চাইলে সব পারে। বিশ্বের বুকে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্যেও আন্দোলন করেছি। ৫২’র সেই বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনেও আমাদের বিজয় হয়েছিল। আমি বাঙালি, আমি বাংলাভাষী, আমি বাংলাদেশি। এই পরিচয় আমি যাদের আত্মত্যাগের, যাদের রক্তের এবং যেসব মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে পেয়েছি তাদের অবদান কোনোদিন ভুলবার নয়। তারাই হলেন বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক। 
আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক যিনি তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ মহানায়কের সম্পর্কে আমি যত জেনেছি-শুনেছি ততই তার প্রতি আমার মুগ্ধতা বেড়েছে। তিনি ছিলেন অন্যরকম ক্ষমতার অধিকারী মানুষ। তার আহ্বানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। মানুষ এসেছিল বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথের সন্ধানে। এদিন অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। প্রদত্ত এ ঐতিহাসিক ভাষণ অসংখ্যবার শুনেছি। যত শুনি তত শুনতে ইচ্ছা করে, তৃপ্তি মেটে না। ৭ মার্চ যার কথা শুনতে নিজ ইচ্ছায় এত মানুষ রেসকোর্স ময়দানে হাজির হয়েছিল তিনি কোনো সাধারণ মানুষ হতে পারেন না। সেদিনের ভাষণে বলা বঙ্গবন্ধুর জাদুকরী গর্জনভরা কথাগুলো আমাকে ভাবিয়ে তোলে। এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবলে আমার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হয়। একটা মানুষ যার কথায় কি ভয়ঙ্কর রকমের আকর্ষণ শক্তি ছিল। যার কথা মানুষের বিবেককে জাগ্রত করেছিল, রক্ত গরম করে দিয়েছিল, শত্রুর মোকাবেলা করার সাহস-শক্তি যুগিয়েছিল। অতঃপর মানুষ জীবনের পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে। তাই নিঃসন্দেহে বলতে পারি, বঙ্গবন্ধু অন্যরকম ক্ষমতার অধিকারী মানুষ ছিলেন। ভাষণ তো সব নেতারাই দেন কিন্তু কজন নেতার ভাষণ এভাবে আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারে? রক্ত গরম করতে পারে? শত্রুর মোকাবেলা করার সাহস-শক্তি জাগায়?  


No comments:

Post a Comment