Wednesday, April 22, 2015

মালয়েশিয়ার প্রথম শহরে

রফিকুল ইসলাম সাগর

পর্তুগিজরা শহরটায় এসেছিল ১৫১১ সালে। তারও অনেক আগে থেকে মালাক্কা রাজ্যের রাজধানী এই শহর। শাসন করত সুলতানরা। মালাক্কা প্রণালীর পাড়ে হওয়ায় এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব ছিল। পর্তুগিজ, ব্রিটিশ আর ওলন্দাজরা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বহুত কাইজা করেছে। কুয়ালালামপুর থেকে বাসে মোটে দুই ঘণ্টার পথ মালাক্কা শহর। মালয়েশিয়ার প্রথম শহর এটি। লোকজন বলে মেলাকা।
কুয়ালালামপুর সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠলাম। সিটগুলো বিমানের মতো ভালো। আমাদের দেশে এ রকম বাসে সিট থাকে ৪২টি, এখানে ৩০। ভেতরটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, আছে এলইডি টিভি ও ওয়াইফাই। দেড় ঘণ্টা পর নামিয়ে দিল মাহকোটা বাস স্টেশনে। এখান থেকে একটি মুড়ির টিনে চেপে মেলাকা সিটির ক্রাইস্ট চার্চ রওনা দিলাম । বাসটির ভেতর নাই এলইডি, নাই ওয়াইফাই। তবে ত্রিশ মিনিট সময় নেওয়ায় কষ্ট বেশি লাগল না।

প্রথমে গেলাম ডাচ স্কয়ারের মালাক্কা ঐতিহাসিক জাদুঘরে ঢুকে দেখি অনেক বিদেশি। একটা পুরো পাড়া নিয়ে জাদুঘর। প্রথমে দেখলাম একটি বিমান। ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে মালয়েশিয়া এটি ব্যবহার করেছিল। পাশেই একই যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত একটি ট্রেন। জাদুঘরে ত্রিশ মিনিট ঘুরে গেলাম আ ফরমোসায় বাড়িতে। পর্তুগিজদের দুর্গ এটি। প্রবেশমুখে কামান আছে। বেশিরভাগই ক্ষয়ে গেছে।
দুর্গ থেকে বেড়িয়ে জোংকার স্ট্রিট যাওয়ার পথে এক সাপুড়েকে পেলাম। গলায় একটি অজগরের বাচ্চা। এটি হাতে নিয়ে ছবি তুললে দিতে হয় তিন রিঙ্গিত। অনেক পর্যটক ভিড় করেছে। এরপর বাম দিকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম। এখানে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহৃত একটি কামান দেখতে পেলাম। প্রায় দশ মিনিট হেঁটে সামনের দিকে এগিয়ে একটি বিশাল বটগাছের কাছে গিয়ে দেখলাম লোহার শিকল গায়ে জড়ানো। জানলাম এগুলোয় আসামিদের বেঁধে রেখে শাস্তি দেওয়া হতো। বটগাছের নিচে একদল সিঙ্গাপুরি পর্যটকের সঙ্গে পরিচয়। তারা সকালে রওনা হয়ে এসেছে আবার সন্ধ্যায় ফিরে যাবে। প্রায় প্রত্যেক বন্ধের দিন সিঙ্গাপুর থেকে অনেক লোক মালয়েশিয়া বেড়াতে আসে। এখানে অনেক রিকশা দেখলাম। দারুণ সাজসজ্জা। রিকশাগুলোয় সাউন্ড বক্স লাগানো। চলতে চলতে গান বাজায়।

পেটে কিছু দিতে একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। আমের জুসের পর 'নাসি গোরেং উদাং' খেলাম। ডিম ভাজা, ভাত ও চিংড়ি মাছ একসঙ্গে মিলিয়েঝিলিয়ে এ সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়। সারা মালয়েশিয়ায় মশহুর। তবে এর আগমন ঘটেছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। মালয়েশিয়ার মালয় ভাষার গোড়াও ইন্দোনেশিয়ায়। তারও আগে আরবির চল ছিল।
খেয়েদেয়ে মেরিটাইম মিউজিয়াম দেখতে গেলাম। বিশাল এক কাঠের নৌকা এখানে অন্যতম দ্রষ্টব্য। শত শত বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই নৌকা। মালাক্কা বন্দরে এটিই নাকি প্রথম বড় নৌকা! এরপর যাই মিনারা তামিং সারি। ৮৫ ফুট উঁচু একটি মিনার এটি। ১০৫ জনের বসার জায়গা নিয়ে একটি গোলাকার বেঞ্চ আছে। ৩০ রিঙ্গিত টিকিট কেটে উঠলাম। তামিং সারি ঘুরতে ঘুরতে ৮৫ ফুট উচ্চতায় উঠল। ওপর থেকে সমুদ্রসহ পুরো মেলাকা দেখা যায়। এককথায় অসাধারণ! বেশি সুন্দর লেগেছে সমুদ্র। যত দূর চোখ যায় নীল।

তামিং সারি থেকে নেমে একটি পার্কে গেলাম। পুলিশকে দেখলাম ঘোড়ায় চড়ে টহল দিতে। কিছুক্ষণ জিরানোর পর ইচ্ছে হলো গোসল করার। সময় বেশি নেই। বিকেল হয়ে এসেছে। দশ রিঙ্গিত দিয়ে সুইমিং পুলের টিকিট কাটলাম। এর পরই জানলাম, সুইমিং ড্রেস ছাড়া নামা যাবে না। অগত্যা পাশের একটি দোকান থেকে সুইমিং ড্রেস কিনলাম। লকারে আমাদের মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে সুইমিং পুলে সাঁতার কাটলাম।
কিভাবে যাবেন
মালয়েশিয়ার ভ্রমণ ভিসা পেতে সময় লাগে তিন কার্যদিবস। প্রতিদিন ঢাকা- কুয়ালালামপুর ফ্লাইট আছে। ভাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে ২৮ হাজার টাকা, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ২৬ হাজার ৮০০ টাকা, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে ৩৬ হাজার টাকা। এক রিঙ্গিত সমান ২৩.৭২ টাকা।

- See more at: http://www.kalerkantho.com/feature/a2z/2014/06/09/94030

দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত ( ০৯ জুন, ২০১৪)

No comments:

Post a Comment