Wednesday, April 22, 2015

বিচ্ছুতে লেখা এবং নোবেল প্রাইজ

রফিকুল ইসলাম সাগর 
বিচ্ছু প্রথম আমাকে লেখক হিসেবে আবিস্কার করেছিল। আমার প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলবিচ্ছুতে। আমার গোবর ভরা মাথার কোনো এক কোনায় সারের সন্ধান পেয়েছিলেন বিচ্ছুসম্পাদক। সেই থেকে আমার লেখা লেখি শুরু। আজ অনেকদিন পর বিচ্ছুতে লিখছি। বিচ্ছু ৬০০ সংখ্যায় পদার্পণ করেছে। বয়স বৃদ্ধি হওয়ার সাথে আমার যেমন পরিবর্তন হয়েছে দিনে দিনেবিচ্ছুর পরিবর্তন হয়েছে আগামীতে আরও পরিবর্তন হবে বিচ্ছু বেচে থাকবে আজীবন। বিচ্ছুর জন্য শুভ কামনা

বিচ্ছুতে আমার প্রথম প্রথম লেখার অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করবো। পাঠক ভয় পাবেন না এই শেয়ার ফেসবুকের অথবা শেয়ার বাজারের শেয়ার না। আজকাল ফেসবুকে কেউ কেউ যেভাবে ছবি শেয়ার করেন এতে হয়তো বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী বিরক্ত। একটা ছবি তুললেই হলো ব্যাস সেই ছবি আপলোড করে শেয়ার করতে দেরী হয় না। ছবিতে যদি দেখতে লাগে কদম খান কেউ কেউ কমেন্টস করেন সাকিব খান নয়তো নাসির উদ্দিন খান। এই শেয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেককে ফেসবুক থেকে ব্লগ করেছি। আরে ভাই ছবি আপলোড দিলে তো নিউজেই দেখা যায় শেয়ার করে কদম খানের মতো কাজ করার দরকার আছে? কেউ কেউ ফেসবুক লাইক পেজ বানিয়ে ছবি আপলোড দিয়ে লিখেন ভাল লাগলে শেয়ার নাইলে লাইক যাই হোক একটু বেশিই বললে ফেললাম মনে হয়। অনেকে হয়তো ইতিমধ্যে সাকিব খান থেকে ভিলেন মিশা সৌদাগরের ভূমিকায় আমাকে খোজা শুরু করেছেন। মনে মনে বলছেন তোমারে যদি পাইতাম তাইলে উপরে শেয়ার করে দিতাম। 

ফেসবুক শেয়ার নিয়ে বললাম এবার শেয়ার বাজারের কথা একটু বলি। বর্তমান শেয়ার বাজারের যেই অবস্থা তাতে হয়তো শেয়ার শব্দ শুনলে অনেকের বুকে চিপ মাইরা উঠে। এই বুঝি দর পতন হলো। শেয়ার নিয়ে অনেক কথা হলো মূল গল্পে আসি। বিচ্ছুতে প্রকাশিত লেখা পড়ে মনে মনে চিন্তা করতাম এই লেখা গুলো লেখক ক্যামনে লেখে? লোক গুলোতো পুরাই তার ছেড়া। আমারও লেখার ইচ্ছা জাগে। দিনের পর দিন চিন্তা করে পড়ার টেবিলে বসে স্যারের দেয়া পড়া না পড়ে বিচ্ছুর জন্য লিখতে চেষ্টা করতাম। খাতার কত যে পৃষ্ঠা নষ্ট হইছে। পাঠ্য বইয়ের পড়া না পড়ে বিচ্ছু পড়ার কারণে স্কুলে গিয়ে কানে ধরে ব্যাঞ্চের উপর দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে অবশেষে বুক ভরা আশা নিয়ে,টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে চিঠির খাম কিনে পাঠিয়ে দিলাম একটি লেখা। ব্যাস ! এখন অপেক্ষা লেখা ছাপা হইব কিনা। ঠিক মতো চিঠি বিচ্ছুর ডেস্কে পৌছালো কিনা,আমার হাতের লেখা সম্পাদক বুঝব কিনা এরকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাইতে থাকলো। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় আলোচনার বিষয় থাকতো বিচ্ছুতে আমার লেখা। বলতাম আগামী বিচ্ছুতে আমার লেখা আসবো দেখিশ। লেখা প্রকাশ না হওয়ার আগেই তো আমি হীট। 
রাতে স্বপ্নের জগতে গেলে দেখতাম বিচ্ছুর বুকে আমার লেখা শত শত তরুণী আমার অটোগ্রাফের জন্য আমার বাড়ির সামনে লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে। আহ আমার যে কী ভাব। দুই সপ্তাহ তিন সপ্তাহ রবিবার সকালে সবার আগে পত্রিকার দোকানের সামনে দাড়িয়ে থাকতাম কিন্তূ না আমার লেখা নাই। আশা নিয়ে আগামী সপ্তাহের অপেক্ষা। অবশেষে এক রবিবার আমার লেখা খানা বিচ্ছুর বুকে দেখতে পাইয়া ছিলাম। মনে খুশির জোয়ার। আমি যেন নোবেল প্রাইজের খুব কাছে চলে গেলাম। নোবেল আমার দরজার সামনে। দরজা খুললেই আমার। নিজেরে খুব বড় লেখক মনে হইছিল। আমি যেন অসাধ্যকে সাধ্য করে ফেলেছি । আম্মাজান আমারে নিয়া গর্ভো করবো আব্বাজান কইব তুই আমাগো বংশের নাম উজ্জল কইরা ফালাইলিরে। খুশিতে আব্বাজান আমার সাথে কুলাকুলি করবো,বাড়ির সামনে মিষ্টির ট্রাক নিয়া আসব এই সব আশা নিয়া জলদি বাড়িতে গেলাম। পথেআরও দুই তিনজনরে জোর করে আমার লেখা পড়িয়েছিলাম। প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা শুধূ বলেছিল মিষ্টি খাওয়া বাড়িতে গিয়ে সবার প্রথম প্রিয় আম্মাজানকে খবরটা দিয়েছিলাম। আম্মাজানের আচরণে মনে হলো আমারে পুলিশ দিয়া ধরাইয়া দিবো আমি অনেক বড় অপরাধ করে এসেছি। আব্বাকে আর দেখানোর সাহস হলো না। মন খুব খারাপ হলো। মুহুর্তের মধ্যে আমি নোবেল পুরস্কার পাওয়া লেখক থেকে দলিল লেখক হয়ে গেলাম। তার পরেও মনে আনন্দ ছিল জীবনেরপ্রথম লেখা পত্রিকায় প্রকাশ বলে কথা। আব্বা-আম্মা রিজেক্ট করছে তো কী হইছে বন্ধুদের সাথে তো ভাব মারা যাবে। কিছুক্ষণ পর আম্মা আব্বাকে গিয়ে বললো আব্বা আমাকে ডেকে বললো কিরে তোর নাকি লেখা প্রকাশ হয়েছে? কই দেখি। আব্বা পড়ে বললো ভালোই তো। আব্বা খুশি হয়েছিল তাই আমাকে একশ টাকা দিয়েছিল। ওহ আমি আবার নোবেলের কাছে......। এর পর থেকে বিচ্ছুতে আমার অনেক লেখা প্রকাশ হতে শুরু হলো। মহল্লায় যেদিক দিয়ে যাই কারো সাথে দেখা হলে বলে কী সাংবাদিক খবর কী? আমার ভাব কে দেখে আমি তো মহল্লার নায়ক। পুরো হীট

১৪/১০/২০১২, দৈনিক যুগান্তর, ফান ম্যাগাজিন বিচ্ছুতে প্রকাশিত 

No comments:

Post a Comment