রফিকুল ইসলাম সাগর
এই প্রথম নির্বাচন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। আমি ছিলাম, মহাখালী টি এন্ড টি স্কুল ভোট কেন্দ্রের ২০৬ নম্বর কক্ষে। ২০ ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রে ছোটখাটো কিছু অনিয়ম ছাড়া সুষ্ঠু ভাবেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমি নির্বাচনের আগে নানান রকম কথাবার্তা শুনেছিলাম। কথাবার্তা ছিল এমন, 'নির্বাচনের দিন এই কেন্দ্রে গন্ডগোল হবে। অনেক জাল পরবে। মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।' সকালে কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগে হটাত একটি উড়ন্ত খবর পেলাম। তা হলো, অমুক দল প্লান করেছে প্রতি কেন্দ্রে এক ঘন্টা করে জাল ভোট দিবে। এই কেন্দ্রে নাকি দুপুরে এক ঘন্টা জাল ভোট দিতে তাদের একটা গ্রুপ ঢুকবে।
এই প্রথম নির্বাচন কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। আমি ছিলাম, মহাখালী টি এন্ড টি স্কুল ভোট কেন্দ্রের ২০৬ নম্বর কক্ষে। ২০ ওয়ার্ডের এই কেন্দ্রে ছোটখাটো কিছু অনিয়ম ছাড়া সুষ্ঠু ভাবেই ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আমি নির্বাচনের আগে নানান রকম কথাবার্তা শুনেছিলাম। কথাবার্তা ছিল এমন, 'নির্বাচনের দিন এই কেন্দ্রে গন্ডগোল হবে। অনেক জাল পরবে। মাইর খাওয়ার সম্ভাবনা আছে।' সকালে কেন্দ্রে প্রবেশ করার আগে হটাত একটি উড়ন্ত খবর পেলাম। তা হলো, অমুক দল প্লান করেছে প্রতি কেন্দ্রে এক ঘন্টা করে জাল ভোট দিবে। এই কেন্দ্রে নাকি দুপুরে এক ঘন্টা জাল ভোট দিতে তাদের একটা গ্রুপ ঢুকবে।
সব মিলিয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ভিতরে কোনো ঝামেলা হলে যেন সাথে সাথে কক্ষ থেকে বেরিয়ে বাইরে এসে খবর দেই। এমনটা করতে বলা হলো আমাদের। কিছুটা আতঙ্ক মনোভাব নিয়ে কক্ষে বসলাম। তার আগে প্রথমে একজন নির্বাচন অফিসারের কাছে সংক্ষিপ্ত ইন্টারভিউ দিয়ে তার স্বাক্ষর করা একটি আইডি কার্ড পেলাম। এখানে যারা ভোট দিতে পারবে তাদের সকলের তথ্যের একটি তালিকা শিট ছিল আমার কাছে। সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ঘন্টাখানেক পর একজন নির্বাচন অফিসার এলেন। আমাদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, সব ঠিক আছে তো? উত্তর দিলাম হ্যা। তারপর তিনি বললেন, সমস্যা হলে কিন্তু আপনারাই দেখবেন। আমরা কিন্তু কিছু করতে পারব না, আপনারা এই এলাকার স্থানীয়। এসব কথা বলে তিনি চলে গেলেন। আমার পাশে অন্যান্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে যারা পোলিং এজেন্ট ছিল তারা সবাই আমার পরিচিত। এলাকার ভাই ব্রাদার। উত্সব মুখর পরিবেশে কাটছিল সময়।
আগেরদিন জেনেছিলাম কেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবেনা। তাই সকালে মোবাইল বাড়ীতে রেখে এসেছিলাম। কিন্তু দেখলাম অন্য সবাই মোবাইল সঙ্গেই এনেছিল। এবং কেন্দ্রের ভেতরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করার ব্যাপারে কোনো বাধা ছিলনা। কক্ষে একজন নির্বাচন অফিসার এসে বলেছিলেন, যারা মোবাইল সাথে এনেছেন মোবাইল বন্ধ করেন। কিন্তু কেউ মোবাইল সত্যিই বন্ধ করল কিনা এ বিষয়ে কোনো কার্যকরী ভূমিকা ছিলনা। শুধু বলেই দায় শেষ। কেন্দ্রের ভেতরে নিরাপত্তার জন্য ছিল পুলিশ ও আনসার। পুলিশের চেয়ে আনসারের সংখ্যা ছিল বেশি। কেন্দ্রের ভেতরে সবার অবাধ মোবাইল ফোন ব্যবহার দেখে মনে হয়েছে, মোবাইলটা বাড়ীতে রেখে না আসলেও পারতাম। একজন ভোটার ভোট দিতে কক্ষের ভেতর ঢুকলে আমার কাছে থাকা তালিকা শিট দেখে সেই ভোটারের তথ্য মিলিয়ে যাচাই করা সে আসল ভোটার কিনা। মিলিয়ে সব ঠিক থাকলে তার তথ্যের স্থলে কলম দিয়ে দাগ কাটা। তার মানে এর ভোট দেয়া হয়েছে। এ ছিল আমার দায়িত্ব।
খেয়াল করলাম, ভোটারকে ব্যালট পেপার দেয়ার পূর্বে তার পেছনে অফিসার একটি সরকারী সিল লাগান। একই সিল ব্যালট পেপার ছিড়ে যে অংশ অফিসারের কাছে থাকে তাতেও লাগান। এবং সেই অংশে ভোটারের ভোট নম্বর লিখে দেন ও ভোটারের টিপসই অথবা স্বাক্ষর রাখেন। তারপরই ভোটার ব্যালট পেপার পান ভোট দেয়ার জন্য। দুপুর ১২টার সময় ভোটারদের ভিড় লেগে যায়। তাদের সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয়। ভোটাররা হইচই শুরু করেদিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে একটু ভয় পেয়েগিয়েছিলাম। মনে মনে আতঙ্ক বিরাজ করছিল এটা আবার অন্যকোন নজিরা নাতো! জাল ভোট দেয়ার গ্রুপ ঢুকল নাকি? এরকম ভাবছিলাম। কিন্তু না একটুপর সুষ্ঠুভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেল। এরই মধ্যে আমাদের সরবরাহকারী খোঁজখবর নিতে এলেন সব ঠিক আছে তো! আমাদের কিছুর প্রয়োজন আছে কিনা এসব জানতে। তাকে জানালাম সব ঠিক আছে। তার পরপরই একজন প্রার্থী এলেন খোঁজখবর নিতে। এভাবেই পেরিয়ে যায় গোটা দিন। বিকেলে যখন বের হলাম বাইরে এসে জানলাম, অসংখ্য ভোট কেন্দ্রে নাকি জাল ভোট দেয়া, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া সহ নানান গন্ডগোল হয়েছে। এসব কারণে দুপুরেই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। এমন খবর জানার পর কিছুটা অবাকই হলাম এই ভেবে যে, তাহলে এই কেন্দ্রে এতটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলো কিভাবে!

No comments:
Post a Comment