রফিকুল ইসলাম সাগর

রাত সাড়ে দশটায় বিমান বন্দর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠলাম। ঝক…ঝক…শব্দে ট্রেন ছুটে চলেছে সিলেটের উদ্দেশে। স্টেশনে ট্রেন থামলেই আমি আর ফাহিম নেমে দাঁড়াচ্ছিলাম। দূরের সিগন্যাল বাতির দিকে দৃষ্টি আমাদের। সবুজ বাতি জ্বলে উঠলেই আবার ট্রেনে উঠে পড়লাম। ওদিকে ফিরোজা খালা আমাদের না দেখলেই চিন্তিত হয়ে যান। কুলাউরা স্টেশনে নেমে চায়ের দোকানে চা অর্ডার দিলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠল। কাপ রেখে দৌড়ে এসে ট্রেনে উঠলাম। শ্রীমঙ্গল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রেল পথ অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য, আশ পাশে শুধুই চা-বাগান। সকাল ৭ টায় সিলেট পৌঁছালাম এবং সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। একটি সিএনজি-চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে মাজার জিয়ারত করতে গেলাম। মাজারের কাছেই একটি হোটেল ভাড়া করলাম থাকার জন্য। সেখান থেকে মাধবকুণ্ড প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় মাধবকুন্ড। এর আগে কখনও আমার যাওয়া হয়নি। শুনেছি মাধবকুণ্ডের ঝরনা অনেক সুন্দর। সিদ্ধান্ত হলো মাধবকুণ্ড যাবো। প্রথমে ফিরোজা খালা যেতে চাইল না। বলল, এই বৃষ্টি-বাদলার দিন না যাওয়াই ভাল। আমি, ইভা, ফাহিম ও বাঁধন ছাড়লাম না। বললাম, গিয়ে দেখোই না, বর্ষায়ই তো মাধবকুণ্ডের ঝরনা পেখম মেলে। তারপর একটা সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া করে সোজা গেলাম মাধবকুণ্ড। যাওয়ার পথে একটি ফেরিতে করে পার হতে হয়েছে। এছাড়া বর্ষার সময় অনেক জায়গায় পথ ছুঁই ছুঁই পানি। বৃষ্টি শুরু হয়েছিল অটোরিকশায় থাকতেই। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ১০ টাকা টিকিট কেটে মাধবকুণ্ড পর্যটন কেন্দ্রে ঢুকলাম। বড় বড় গাছ, ভেজা পাখি, পাহাড় সব মিলিয়ে দারুণ ভাল জায়গা। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরও কিসের শব্দ যেন কানে আসছিল। বাঁয়ে ঘুরতেই ঝরনা দেখতে পেলাম। বেশ বড় কলেবর নিয়ে পূর্ণ তেজে নিচে গড়িয়ে পড়ছে। এই শব্দই পাচ্ছিলাম এতক্ষণ। এরপর তো আর দেরি চলে না। দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ছোঁয়াছুঁয়ি খেললাম, ডুবে থাকলাম, ভেসে তো থাকলামই। উঠতেই চাইছিলাম না। কিন্তু ফিরোজা খালা ছাড়ল না। ঘণ্টা তিনেক পর তো কান ধরেই উঠাল। বিকেল হয়ে গিয়েছে। বাইরে আমাদের জন্য অটোরিকশা চালক উজ্জ্বল মিয়া অপেক্ষা করছেন। উজ্জ্বল মিয়ার সাথে আগে থেকেই চুক্তি করে রেখেছিলাম আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ফিরে না আসবো তিনি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেন। সেখানকার একটি খাবার হোটেলে খাবার খেয়ে অটোরিকশায় উঠে বসলাম। রাতে আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে সকালে বের হলাম জাফলং ও তামাবিল যাওয়ার উদ্দেশে। অটোরিকশা চালক উজ্জ্বল মিয়াকে ফোন করে বললাম তার অটোরিকশা নিয়ে আসার জন্য। ততক্ষণে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। জাফলং যাওয়ার পথে চোখে পড়েছে বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড় অনেকগুলো ঝরনা কিন্তু ঝরনাগুলো ভারতের সীমান্তের ভেতরে থাকায় কাছে গিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষে জাফলং অবস্থিত। জাফলং যাওয়ার পথেই তামাবিল চেক পোস্ট। যাকে বলা হয় তামাবিল জিরো কিলোমিটার সেখান থেকে বিএসএফ ক্যাম্প খুব কাছে। ভারতীয় ট্রাক মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল। পাসপোর্ট ভিসা থাকলে যে কেউ তামাবিল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারে। কিছুক্ষণ অবস্থান করে ছবি তুললাম। তারপর সেখান থেকে সোজা জাফলং। জাফলং-এ আছে পাহাড়, ঝরনা, কমলা বাগান, চা বাগান ও ডাওকি নদী। ডাওকি নদী থেকে পাথর তোলার দৃশ্য উপভোগ্য। পুরো সিলেটজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা ঢাকার বন্দি জীবনে থেকে দেখা যায় না।
শিশু সাহিত্য বিষয়ক ম্যাগাজিন 'নতুন পাতা'য় প্রকাশিত (মে ২০১২)।
No comments:
Post a Comment