Sunday, May 10, 2015

মালয়েশিয়ার প্রথম পরিকল্পিত শহর


10 May 2013, Daily Sangbad


শাহ আলম মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের অতি পরিচিত একটি নাম। মালয়েশিয়াতে যত বাঙালি আছেন আমার জানা মতে তার মধ্যে বেশির ভাগ বাঙালি আছেন শাহ আলম এবং জোহর বারুতে। শাহ আলম মূলত ফ্যাক্টরি এলাকা। মালয়েশিয়ার বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরি এখানে। এই ফ্যাক্টরি গুলোতে যারা কাজ করে তার বেশিরভাগই বাঙালি,ইন্দোনেশিয়ান,মায়ানমার,ইন্ডিয়ান ও নেপালী শ্রমিক। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ১৬ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত শাহ আলম। ১৯৫৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার পরেপ্রথম মালয়েশিয়ার পরিকল্পিত শহর। রাবার ও পাম তেল শহর হিসেবে একসময় সুপরিচিত ছিল। 

এই পর্যন্ত অনেক জায়গা ভ্রমন করেছি। আমার ভ্রমণের বেশিরভাগ ভ্রমন ছিল অল্প সময় নিয়ে। যেমন সকালে গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে আসা। আবার বিকেলে গিয়ে পরদিন ফিরে আসা। মালয়েশিয়া গিয়ে অনেক স্থানে গিয়েছিলাম। একদিন গেলাম শাহ আলম ভ্রমনে। সেখানে গিয়েছিলাম মূলত বাংলাদেশের একই মহল্লার এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। এই সুযোগে একটু ঘুরাও হবে। যদিও শাহ আলম পর্যটন ক্রেন্দ্র না। অনেক দিন যাবত সেই বড় ভাইয়ের আমন্ত্রণ। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তার ওখানে যেতে হয়েছে। বিকেলে কুয়ালালামপুর থেকে যাত্রা করি। পাসার সিনি বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠি। বাস ভাড়া খুবই কম (৩ রিঙ্গিত)। মালয়েশিয়ার রাস্তার সৌন্দর্যের কথা না বললেই নয়। যেহেতু দেশটি পর্যটন কেন্দ্র তাই এখানকার রাস্তা গুলো খুব সুন্দর। চলতি পথে স্পষ্ট ভাবে দিক নির্দেশনা দেয়া থাকে। এছাড়া এ দেশের পাহাড় সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। সব খানেই চোখে পড়বে পাহাড়। 
প্রায় দেড় ঘন্টা পর পৌছালাম আমার নির্দিষ্ট গৌন্তব্য আলম মেগা নামক জায়গায়। বড় ভাই সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অনেকদিন পর তার সাথে দেখা। পথে আর সময় নষ্ট করলাম না। বড় ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে দেখতে পেলাম অনেক বাঙালি মুখ ও বাঙালি মালিকাধীন দোকান। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছে আমার দেশের কোনো ব্যস্ত শহরে আছি। বড় ভাইয়ের বাড়িতে আমি আর সে ছাড়া আর কেউ নেই। বাকি রুমমেট সবাই ফ্যাক্টরিতে কাজে গিয়েছে। দুজনে নাস্তা করে নিলাম। রাতে তার সহকর্মী সবাই কাজ শেষ করে বাড়িতে এলো। আড্ডায় বসলাম। প্রবাসে একসাথে অনেক বাঙালি আড্ডায় বসলাম। পরদিন কারো কাজ নেই। তারা সবাই আমাকে পেয়ে খুশি হলো। সবাই আমার কাছ থেকে দেশের খোজ খবর জেনে নিচ্ছিল। ভোর পর্যন্ত আড্ডা চলল। সকালে খেয়ে ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে ঘুরতে বেড় হলাম ক'জন মিলে। শাহ আলম যারা থাকেন বন্ধেরদিন আলম মেগা পার্ক হচ্ছে সবার বিনোদনের জায়গা। পার্কের ভিতর প্রবেশ করে প্রচন্ড ভীর লক্ষ্য করলাম। দেশী-বিদেশী অনেক মানুষ। সেদিন রবিবার মালয়েশিয়া বন্ধের দিন, একদিন যেন সবার আনন্দ করার দিন। বেশিক্ষণ অবস্থান করলাম না। বেড় হয়ে তামান ইন্ডাহ পথ ধরে হাটতে থাকি। খুব শান্ত পরিবেশ। সাজানো গোছানো সব কিছু। চলতি পথে চোখে পড়েছে কাশফুল। বিশাল জায়গা জুড়ে শুধূ কাশফুল গাছ। হাটতে হাটতে পথের শেষ দিকে গিয়ে মনে হয়েছে এ যেন আমার দেশের কোনো গ্রাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি বিদেশের কোনো দেশে অবস্থান করছি। টঙ্গী বাইপাসের রাস্তা দিয়ে নরসিংদী যাওয়ার দৃশের মতো মনে হচ্ছিল। আখ বাগানের ভিতর প্রবেশ করে নিজ হাতে কিছু আখ তুলে নিলাম। পাশে আরও আছে ভুট্টা বাগান। ভুট্টা আমার খুব একটা পছন্দ না। আখ চিবুতে চিবুতে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। 

লেখা ও ছবি: রফিকুল  ইসলাম সাগর 

No comments:

Post a Comment