Sunday, May 10, 2015

বাতু গুহায় একদিন

আজ (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪) দৈনিক বর্তমান-
এর হাওয়া বদল পাতায় প্রকাশিত
রফিকুল ইসলাম
ঢাকা থেকে বিমানে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে রাজধানী কুয়ালালামপুর পৌছতে। পাহাড়,সমুদ্র,হৃদ উপত্যকার নৈসর্গিক রূপের রানী মালয়েশিয়া। প্রকিতির আদিম ও নিবিড় সানিধ্য অনুভব করার জন্য এখানে আছে বৈচিত্র। ছবির মত পাহাড়ের পর পাহাড়। পাহাড়ের বুকে আধুনিক সুন্দর জনপদ। রূপের জাদু ছড়িয়ে আছে এদেশের ভাজে ভাজে। দেশটির নয়নাভিরাম হয়ে উঠেছে পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণ। পর্যটকদের যা প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে। আকাশভেদী পাহাড় ছলছল ঝর্ণাধারা বৈচিত্র সব সব দৃশ্য ভাসিয়ে নিয়ে যায় রূপ কথার পাতায় পাতায়। মনোরম সব স্থানের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পর্যটনের অবকাঠামো,উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা। 
কুয়ালালামপুরের মূল পয়েন্ট 'কেএলসিসি' থেকে একটি টেক্সিক্যাব ভাড়া করে রওনা করেছিলাম বাতু গুহায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ভাড়া ঠিক করা হয়েছিলো স্থানীয় ৩০ রিঙ্গিত। বাতু গুহা 'কেএলসিসি' থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। মালয়েশিয়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের মাঝে যে ক'টি স্থান অতি আকর্ষনীয় তার মধ্যে অন্যতম বাতু গুহা। টেক্সিক্যাব চালক ভারতের তামিল, সে হিন্দুধর্মালম্বী নাম আদি। আদির বয়স ৬৫ বছর কিন্তু তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই। আমাদের দেশে ৬৫ বছর বয়সের একজন মানুষ বয়সের ভারে ঝুকে পড়ে, আদি এখনো খুব শক্তিশালী। তাকে দেখে আমি অনুমান করেছিলাম বয়স ৪০ বছর হবে। তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি সে খুব ভালো মানুষ। টেক্সিক্যাব চালক আদিকে মালয়েশিয়া সম্পর্কিত একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছিলাম সেও আন্তরিকতার সাথে আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল। তার প্রায় সব কিছুই জানা। মালয়েশিয়ার প্রতিটি টেক্সিক্যাব চালক ইংলিশ ভাষায় কথা বলায় দক্ষ। চালকের সাথে কথায় কথায় পৌছে গেলাম বাতু গুহার গেইট-এর সামনে। গেইটের বাহিরের রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছিলো একটি বিশাল বড় মূর্তি। মূর্তিটির আসে পাশে উচু উচু পাহাড়, সব মিলিয়ে নৈসর্গিক দৃশ্য। চোখ দু'টি অস্থির হয়ে উঠলো ভিতরে গিয়ে দেখার জন্য। ঝটপট টেক্সিক্যাব চালককে তার ভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। মালয়েশিয়াতে হিন্দুধর্মালম্বিদের সব চেয়ে বড় মন্দির বাতু গুহা। পাহাড়ের মাঝে প্রাকিতিক ভাবে সৃষ্টি হয়েছে এই গুহা। এখানকার পাহাড় গুলো এতই পুরাতন যে মাটি গুলো সব পাথরে পরিনত হয়েছে। এই জন্যই এই গুহার নাম বাতু গুহা। ২০০৪ সালে এই গুহার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ২০০৬ সালে। গুহার ভিতরে আগে থেকেই মন্দির ছিল সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজের সময় বাইরে নির্মান করা হয় প্রায় ৬-৭ তলা সমান উচু মূর্তি। ভিতরে গিয়ে বড় মূর্তিটির সামনে দেখতে পাই ঝাকে ঝাকে কবুতর। আগত পর্যটকরা কবুতর গুলোকে খাবার দিচ্ছিল। কেউ কেউ ছবি তুলছিলো। মূর্তির সামনে আমরা সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। এবার গুহার ভিতরে প্রবেশ করার পালা, উঠার জন্য খাড়া সিড়ি। ২৭২টি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে হাপিয়ে গিয়েছিলাম। উঠার সময় মাঝ পথে ক'বার জিরাতে হয়েছে। সিড়িতে অসংখ্য বানর দৌড়া দৌড়ি করে। তবে এরা ভদ্র বানর কাউকে খামচি কাটে না। গুহার ভিতরে প্রবেশ করে মাথার উপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাথরের টুকরো ঝুলে আছে। ভয় লাগলো যদি পাথরের টুকরো মাথার উপর এসে পড়ে। কিন্তু না এই পাথর মাথার উপর পরার কোনো সম্ভাবনা নেই। ভিতরকার দৃশ্য গুলো আমার কাছে হিন্দি সিনেমার দৃশ্যের মত মনে হচ্ছিল। এখানে অনেক গুলো হিন্দি সিনেমার শ্যুটিং হয়েছে। গুহার ভিতরে কোলকাতা থেকে পার্থনা করতে আসা অনেক পর্যটকদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। জানতে পেরেছি ভারত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বাতু গুহায় পার্থনা করতে আসে। গুহার শেষ দিকে গিয়ে দেখতে পাই উপর দিকে একটু খোলা, যেখান দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছিলো। এছাড়া ভিতরেও বানরের আনা গোনা দেখতে পাওয়া যায়। আরও আছে দেব-দেভির আদি মূর্তি। গুহার ভিতর থেকে বাহির হয়ে হাতের বাম দিকে চোখে পড়ে একটি ডাবের দোকান। ডাব গুলোর সাইজ বিশাল বড় বড়, দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। ডাবের পানিতে চুমুক দিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলাম। এই মুহুর্তে এমন কিছু প্রয়োজন ছিলো। সিড়ি বেয়ে উঠে নেমে পুরো ক্লান্ত ছিলো শরীর। ডাবের পানি পান করে আত্মা শান্তি পেলো। ফেরার পথ ধরেছিলাম সূর্য ঢোলে পড়তে শুরু করলে। 

কিভাবে যাবেন
মালয়েশিয়ার ভ্রমণ ভিসা পেতে সময় লাগে তিন কার্যদিবস। প্রতিদিন ঢাকা- কুয়ালালামপুর ফ্লাইট আছে। বিমান ভাড়া- বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ২৬ হাজার ৮০০ টাকা (আসা-যাওয়া), মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে ৩৬ হাজার টাকা (আসা-যাওয়া), ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে ২৮ হাজার টাকা (আসা-যাওয়া)। বিমানবন্দর থেকে বাতু গুহা টেক্সিতে যেতে লাগে ১১০ রিঙ্গিত। এখন ১ রিঙ্গিতে ২৩.৭২ টাকা। ফ্লাইটের ভাড়া বাড়তে বা কমতে পারে। 
লেখা ও ছবি: রফিকুল ইসলাম সাগর 

No comments:

Post a Comment