Saturday, May 9, 2015

দুই চাকায় নরসিংদী ভৈরব কিশোরগঞ্জ

১৫/২/২০১৩ দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত

অপরূপ সৌন্দর্যের নিসর্গ আর প্রকৃতির অফুরান সম্পদে বৃস্তিত বাংলাদেশ। যেদিকে যাই প্রকৃতির ছবি একে যাই আপন মনে। সবুজ, মনোহরা ঝর্না, নদী, বিল, হাওর, আকাশের কোলে হেলান দিয়ে থাকা পাহাড়, সোনালী ধানের গুচ্ছ, মাছের সন্তরণ সব আছে আমাদের বাংলায়। 

নতুন কিছু দেখার নেশায় বের হয়ে যাই নতুন নতুন জায়গা ভ্রমনে। শহরের কোলাহল ছেড়ে একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাতে মটর সাইকেল নিয়ে ভ্রমনে বের হয়েছিলাম। হাড় কাপানো শীতে দুই বন্ধু রাজধানী ঢাকা থেকে দুপুরে যাত্রা করেছিলাম নরসিংদীর উদ্দেশ্যে। মটর সাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে দূরে এই প্রথম না এর আগেও অনেকবার ঘুরা হয়েছে। তাই খুব বেশি ভয় ছিল না মনে। বনানী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ছিল বিশাল যানজট। গাড়ির হর্নের শব্দে মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গিয়েছিল। টঙ্গী-পুবাইল পার হয়ে যাওয়ার পর কিছুটা শান্তি ফিরে এলো। টঙ্গী থেকে নরসিংদী বাইপাসের রাস্তা খুব বেশি বড় না। দুই পাশে দুইটি গাড়ি চলাচল করতে পারে। এই বাইপাসটি উদ্বোধন হওয়ার পর কালিগঞ্জ, ঘোড়াশাল, নরসিংদী যাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। পথের দু'পাশে কখনো শাক সবজির বাগান, কখনো ধান ক্ষেত,কখনো ঘর বাড়ি। পুরোটাই গ্রাম্য প্রাকীতিক পরিবেশ। সড়কের পাশেই ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। মাঝে মাঝে একটি করে ট্রেন ছুটে যায় রেলপথ দিয়ে। কালিগঞ্জ মিশন গিয়ে যাত্রা  বিরতি নিলাম। ঘুরে দেখলাম খ্রিস্টান ধর্মাবিলম্বিদের গির্জা ও কবরস্থান। তারপর আবার ছুটে চলা। 

ঘোড়াশাল 
ঘোড়াশাল ব্রিজে গিয়ে ইচ্ছা হলো ঘোড়াশাল রেললাইন ব্রিজে উঠতে। মটর সাইকেল থামিয়ে কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম ব্রিজের উপর। বিকেলে গিয়ে পৌছলাম নরসিংদীর চড় বেলাব গ্রামে। খুব পরিচতি একটি গ্রাম। অনেকবার এসেছি। বেলাব গ্রামে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেলাব জামে মসজিদ। এত সুন্দর মসজিদ আরকোথাও দেখেছি বলে মনে হয় না। বন্ধুর বাগান বাড়ি সেখানে। বাড়িটিতে কেউ থাকেনা। আমরা চাবি নিয়ে চলে আসি ঘুরতে। যারা আসি নিজেরা রান্না করি খুব আনন্দে কাটে সময়। আমাদের সাথে এসে যোগ দিয়েছিল সেই গ্রামের তিনজন বন্ধু। যারা সবাই পূর্বে থেকেই পরিচিত। 

রাতে মাটির চুলায় রান্না করা হলো। খাওয়া শেষ করে শুরু হলো আড্ডা। মধ্য রাতে সবাই ঘর থেকে বাইরে বেড় হলাম। অতিরিক্ত কুয়াশার কারণে চারদিকে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ঝি ঝি পোকা আর বেঙ ডাকছিল। প্রায় পাচ কিলোমিটার দুরের একটি ব্রিজে গিয়ে সবাই বসলাম। এবার শুরু হলো লাগামহীন আড্ডা। আশে পাশে আর কেউ ছিলনা। শুধু আমরা ক'জন। হইচই এবং আনন্দ করে কেটেছে ভোর পর্যন্ত। ব্রিজের নিচের নদীতে পানি ছিল না। নদীর পানি শুকিয়ে গিয়েছে। আগে এখান দিয়ে নাকি লঞ্চ ও টলার চলাচল করত। দীর্ঘ অনেক বছর যাবত পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে টলার ও লঞ্চ চলাচল করে না। স্থানীয়রা তাই এই নদীটিকে মরা নদী বলে ডাকে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ভৈরব গিয়ে নাস্তা খাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। মটর সাইকেলে করে সবাই যেতে পারব না তাই সাথে একটি সি এন জি অটোরিক্সা ভাড়া করে ভৈরব গিয়ে নাস্তা করলাম। ভৈরব ব্রিজের নিচে নদীর পাশে পাথরের উপর কিছুক্ষণ অবস্থান করলাম। অসংখ্য পর্যটকের ভীর ছিল। বেলা হওয়ার সাথে মানুষের ভীর বাড়ছিল। 
বেলাব জামে মসজিদ

এবারের গন্তব্য কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর। প্রথমে গিয়েছি জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। যেহেতু আগে যাইনি তাই যাওয়ার পথে স্থানীয়দের অনেকবার জিজ্ঞাসা করতে হয়েছে। তারা পথ দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের। বিশাল জায়গা জুড়ে জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের বড় মেডিকেল কলেজ গুলোর মধ্যে একটি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আশে। তাদের থাকার জন্য আছে হোস্টেল। জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসায়ী মরহম জহিরুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জের পথ অনেক সুন্দর। প্রতিটা গ্রাম সাজানো গোছানো। আধুনিকতার সব ছোয়া সেখানে। 
কিশোরগঞ্জ গিয়ে জেনেছিলাম জহিরুল ইসলাম বিমান বন্দরের কথা। গিয়েছিলাম সেখানে। অনেক বছর আগে জহিরুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে কিশোরগঞ্জে একটি ব্যক্তিগত বিমান বন্দর বানাতে চেয়েছিলেন। কাজও শুরু করেছিলেন। রানওয়ের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া একটি ভবন নির্মান করা হয়েছিল। তার মিত্যুর পর এই বিমান বন্দরটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বিমান বন্দরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর যাওয়ার পথে এই পরিত্যক্ত বিমান বন্দরটির অবস্থান। সেখান থেকে ইচ্ছে না থাকা সত্যেও যাত্রা করলাম আবার কর্মব্যস্ত জীবনের উদ্দেশ্যে।

লেখা ও ছবি: রফিকুল ইসলাম সাগর

No comments:

Post a Comment