Thursday, May 28, 2015

আনু ও মাহী

  • রফিকুল ইসলাম সাগর



ফুটবল বিশ্বকাপের জ্বরে কাঁপছে সারা দেশ। মাহী আর্যেন্টিনার সমর্থক। প্রিয় দলের পতাকা ওড়াতে বাড়ির ছাদে গিয়ে উঠলো মাহী। সাথে আরো কজন বন্ধু। ছাদের এক কোণায় পতাকা ওড়াতে গিয়ে দৃষ্টি গেলো পাশের বাড়ির বারান্দায়। তারপর বার বার চোরা চোখে তাকাতে থাকে সেদিকে। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। মেয়েটিকে দেখার পর, সেদিক থেকে আর মাহীর দৃষ্টি ফেরাতে ইচ্ছা করছে না। কাছে গিয়ে কথা বলতে
ইচ্ছা করছে, নাম জানতে ইচ্ছা করছে। মাহী বন্ধুদের কিছু বুঝতে দিলো না।
বিকেলে বাড়ির ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে মাহী। দৃষ্টি সেই বারান্দায়। এদিক-সেদিক পায়চারি করছে। বারান্দায় অন্য একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো; মনে হচ্ছে ঘুড়ি ওড়াবার সময় দেখা, সেই মেয়েটার বড় বোন ও। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপু, তোমরা কী এখানে নতুন এসেছো? আমি এই বাড়িতে থাকি।’
এভাবেই শুরু। অনেকক্ষণ কথা বলার পর অপুটির সাথে ভাব জমে গেলো মাহীর। মাহী যাকে খুঁজতে ছাদে এসেছিলো, জানতে পারলো ওর নাম আনু। আনুকে ডেকে আনলো তার বড় বোন তনু। আনু ও তনু দুজনের সাথে বন্ধুত্ব হলো মাহীর। কাছে আসার প্রথম পরীক্ষায় সে পাশ। মোবাইল নাম্বার নিয়ে শুরু হলো কথা বলা। কথা বলতে বলতে কোনো কোনো দিন ভোর হয়ে যায়। বন্ধুরা মাহীকে ফোন করে পায় না। বন্ধুদের সাথে আড্ডাও দিতে যায় না সে এখন। সারাদিন থাকে বাড়ির ছাদে। আনুকে দেখলে ওর সাথে কথা বললেই শুধু মাহীর ভালোলাগে। এক দিন, দুজনে বাইরে ঘুরতে বের হয়। খুব কাছাকাছি দুজন। অনেকটা সময় এক সাথে থাকার সুযোগ পায়। অনেক কথা হয়, অনেক কিছু জানা হয় দুজন দুজনার। ভালোলাগা আরো বাড়ে। কিন্তু বলা হয় না, ভালোবাসি।
মাহী ভাবে, আনুও হয়তো আমাকে ভালোবাসে। ভালো না বাসলে একসাথে ঘুরতে যায় কেনো, এতো কথা বলে কেনো? থাক, ভালোবাসি বলার কী প্রয়োজন আছে, বাকি সব কিছু তো ঠিকই আছে।
এরপর আবারো এক দিন ঘুরতে বের হয়েছিলো ওরা, মাহী বলে, ‘আচ্ছা আনু, তোমার কী আর কোনো ছেলেবন্ধু আছে?’
‘নাহ!’
‘আমাকে তোমার কেমন লাগে?’
‘বারে! ভালোলাগে বলেই তো তোমার সাথে কথা বলি, তোমার সাথে ঘুরে বেড়াই।’
মাহীর আনন্দ আরেকটু বেড়ে গেলো। আনু তাকে ভালোবাসে, এই কথা বুঝার আর বাকি নেই।
এভাবেই পার হয়ে গেলো দুবছর। এক দিন মাহী জানলো, আনুরা বাসা ছেড়ে চলে যাবে। মাহীর খারাপ লাগে। আনু বললো, ‘আমি দূরে চলে যাচ্ছি তো কী হয়েছে? মোবাইলে তো কথা হবেই।’
মাহী কেবল মুচকি হাসে।
আনুরা বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, কয়েকদিন ঠিক মতোই মোবাইলে যোগাযোগ হয় ওদের। হঠাৎ এক দিন আনুর মোবাইল বন্ধ। সারা দিন ওর মোবাইলে কল দিয়েই যাচ্ছে মাহী, কিন্তু বন্ধ… বন্ধ… বন্ধই বলে যাচ্ছে…
কী করবে ভেবে পায় না মাহী। চরম উত্তেজনা আর ভয়ে হাত-পা কাঁপছে ওর। কোনো বিপদ হলো না তো? আনুদের নতুন বাসার সামনে গিয়ে প্রতিদিন ঘুরঘুর করে সে; একবার যদি দেখা হয়ে যায়; এই আশায়। কয়েক দিন এভাবে পার হয়ে গেলো। ফলাফল শূন্য। বুক ফেটে কান্না আসে মাহীর। এর মধ্যেই অন্য একটা ছেলের সাথে আনুকে দেখতে পায় মাহী।
এই দৃশ্য দেখার পর ওর মরে যেতে ইচ্ছে হয়। অনেক চেষ্টার পর আনুর সাথে কথা বলার সুযোগ হলো। ‘আনু, আমার সাথে এমন করলে কেনো? কী করেছি আমি? তুমি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে যে?’
আনু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, ‘যোগাযোগ বন্ধ করেছি তাতে কী হয়েছে? তোমার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক তো ছিলো না যে, যোগাযোগ বন্ধ করা যাবে না।’
মাহী ভাবে, মানুষ যখন নতুন জায়গায় যায়, তখন সেখানে অনেক বন্ধুবান্ধব হয়। আবার যখন সেখান থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়, তখন সেখানে আরো নতুন বন্ধুবান্ধব পায়; তখন হয়তো পুরানো বন্ধুদের ভুলে যেতে হয়! এটাই কি বাস্তবতা?
মাহীর আর কিছু বলার থাকে না। শুধুই অবাক হয় সে। খুব কষ্ট হচ্ছে। বিধাতা কেনো ভালোবাসা সৃষ্টি করেছে? ভালোবাসা সৃষ্টি না করলে, কী এমন ক্ষতি হতো! তবু সৃষ্টিকর্তার প্রতি সে মনে মনে প্রার্থনা করে, আনু যেখানেই থাকে, ভালো থাকে যেনো। []
::

No comments:

Post a Comment