Thursday, May 28, 2015

অনির্দিষ্ট গন্তব্যে ট্রেন ভ্রমন


ভ্রমণের মাঝে লুকিয়ে থাকে নানা অভিজ্ঞতার কথা। অন্য সব যানবাহনে ভ্রমণের চেয়ে ট্রেন ভ্রমণের মজাটা সম্পূর্ণ আলাদা। দেশে এবং বিদেশে প্রায় সব রকমের ট্রেনে ভ্রমন করেছি। একেক দেশে ট্রেনের একেক নাম।
আমার জীবনের ট্রেন ভ্রমণের স্মৃতি গুলো সব সময় মনে পড়ে যায়। ট্রেনের ঝক ঝক শব্দ,যানজট বিহীন পথ। ট্রেন লাইনের দু'পাশে সারি সারি গাছ, দেখা যায় আশে পাশে বাড়ি ঘর সব কিছুকে পাল্লা দিয়ে ছুটে চলেট্রেন তার গন্তব্যে। ছোট বেলা থেকেই আমার ভ্রমণের নেশা। কোথাও ভ্রমনে যেতে ট্রেনকে বেছে নেই আমি সবার আগে। ট্রেন ভ্রমণের অসংখ্য অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। চোখের সামনে ঘটেছে অনেক ট্রেন দুর্ঘটনা। সময় মতো গন্তব্যে না পৌছানোর কারণে অনেক রাত কাটিয়েছি রেল স্টেশনে। এছাড়া ট্রেনের সময় সূচী বিলম্ব হওয়ার কারনেও ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে রেল স্টেশনে। কিছুক্ষণ পর পর চায়ের দোকানে গিয়ে চা পান করা, প্লাট ফর্মে বসে বসে অপেক্ষা করা, নানান রকমের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, নানান রকমের ঘটনা সেই মুহূর্ত গুলো ছিল আমার জীবনের ভালো কিছু মুহূর্ত। স্টেশন ও পার্শবর্তী দৃশ্য গুলো আমার চোখে খুব ভালো লাগে। সব স্টেশনের চেহারা একই রকম। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন জীবনের প্রথম স্কুল ফাকি দিয়ে দু'জন বন্ধু ট্রেনে করে চলে গিয়েছিলাম ঘোড়াশাল রেল স্টেশনে, তখন থেকে ট্রেন ভ্রমণের নেশা আমার বুকে বাসা বাধে। তারপর থেকে শুরু হলো আমার ট্রেনভ্রমন। বাংলাদেশের প্রতিটি রেল স্টেশন আমার পরিচিত, সব তথ্য আমার জানা। অনির্দিষ্ট গন্তব্যে চলে যেতাম ট্রেনে করে। সকালের ট্রেনে যেতাম আবার রাতে আরেক ট্রেনে ফিরে আসতাম। রাতের ট্রেনে জানালার পাশে বসে মুহুর্তটা খুবই উপভোগ্য। মনে আবেক চলে আশে, অনেক ভাবনা সৃষ্টি হয় হৃদয়ে। নিজের মনের সাথে নিজের কথা বলা। কবিতার ছন্দ সৃষ্টি করা। রাতের আধারে দূরের দৃশ্য গুলো ঠিক ভাবে দেখা যায় না, কল্পনায় আবিস্কার করতাম কী ঐখানে। ভ্রমনে গিয়ে পকেটের টাকা ফুরিয়ে গেলে বাড়ি ফেরা নিয়া ভয় পেতাম না। ট্রেনে টিকেট ছাড়া ও টাকা ছাড়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও হয়েছে আমার। একবার আমি আর আমার এক বড় ভাই কুলাউড়া যাওয়ার পথে নরসিংদী রেল স্টেশনের কাছে রেল দুর্ঘটনার শিকার হই। যে কারণে ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময়ের পাচ ঘন্টা পর কুলাউড়া রেল স্টেশনে পৌছে। পরের দিন বাড়ি ফেরার পথে পকেটে স্বল্প পরিমান টাকা। মধ্য রাতে বেছে নিলাম একটি লোকাল ট্রেন। বাড়ি ফেরার জন্য উঠে বসলাম লোকাল ট্রেনে। কুলাউড়া স্টেশন থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়লো দেড় ঘন্টা পর। মনে মনে ধারণা করে নিলাম এই ট্রেন পৌছাতে কমপক্ষে দু'দিন লাগবে। লাগলে লাগুক না এই বলে মনকে সান্তনা দিলাম। প্রতিটা স্টেশনে থামতে থামতে পরদিন বিকাল ৪ টায় ট্রেনটি ঢাকা বিমান বন্দর রেল স্টেশনে পৌছে ছিল। ট্রেন ভ্রমনে বাধা এসেছে অনেক তার পরেও বন্ধ হয়নি ট্রেন ভ্রমন। 

লেখা ও ছবি: রফিকুল ইসলাম সাগর 

১৭ মে ২০১৩ দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত 

No comments:

Post a Comment