Thursday, May 28, 2015

নিজেকে প্রশ্ন করুন

  • রফিকুল ইসলাম সাগর
যেই দেশের মানুষ যেমন সেই দেশের সরকার, প্রশাসন সেই রকম এমনটাই জানি। যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা আমাদের ঠকিয়েই যাচ্ছেন। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ। আমরা যদি ঠিক থাকতাম তাহলে দেশও ঠিক থাকত। আমরা প্রতিবাদ করতে জানি না। জানলেও জায়গামতো প্রতিবাদ করি না। নিজেরা নিজেরা চায়ের কাপে ঝগড়ার ঝড় তুলি। তর্ক-বিতর্ক যা-ই করি সব চার দেয়ালের ভেতরে। নিজের দাবি আদায়ে পথে নামতে ভয় পাই। শুধু নিজে বিপদে পড়লেই আমাদের টনক নড়ে, অন্যের বিপদে আমাদের কিছু যায়-আসে না।
আমাদের মধ্যে সচেতনতা নেই, নেই ঐক্যবদ্ধতা। আমরা অনেক কিছুই জানি না, জানার আগ্রহও নেই। জেনেও অপরাধীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি, আবার তার কাছেই ভালো কিছু আশা করি। অধিকার আদায় করতে জানি না, তাই আমরা বঞ্চিত। সরকারি কাজে ঘুষ দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও ঘুষ দিতে বাধ্য হই। সবকিছুতেই আমাদের নীরব ভূমিকা। অনিয়মই সর্বত্র নিয়ম। আমরা দেখতে থাকব, সব এভাবেই চলতে থাকবে। শেষ হবে না কিছুই। সরকার, সরকারি অফিস চলবে আমাদের টাকায়। রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নামক রোলারের নিচে পিষ্ট হব। আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা হয়ে যায় মিথ্যা। সত্যকে মিথ্যা বলে মেনে নিতে হয়। সব যেন সিনেমা। ইতিহাস সাক্ষী, দেশের মানুষ সব ক্ষমতার উৎস। দেশের মানুষ যদি নিঃস্বার্থভাবে দেশপ্রেম থেকে অধিকার আদায়ে এক হয়ে পথে নামে তাহলে বিজয় আমাদেরই হবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কী চান!
অনেক আগে একজন নেতার একটি গল্প শুনেছিলাম অন্য একজনের কাছ থেকে। হুবহু গল্পটি এবং সেই নেতা কে ছিলেন ঠিক মনে নেই। গল্পটি আমি আমার মতো করে উপস্থাপন করলাম নেতার নেতৃত্বে সন্তুষ্ট হয়ে এবং তার প্রতি চরম ভালোবাসা থেকে দেশের একজন সাধারণ কৃষক নিজ ক্ষেতের মিষ্টিকুমড়া নিয়ে নেতার বাড়ির সামনে গেলেন তাকে উপহার দেয়ার জন্য। প্রতিদিনকার মতো নেতার বাড়ির চাকর বাজার করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিল্ডিংয়ের নিচে নামল। দেখতে পেল একজন লোক মিষ্টিকুমড়া হাতে দাঁড়িয়ে আছে। চাকর মনে করল, লোকটি মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করতে এসেছে। দ্রুত লোকটিকে সাইডে নিয়ে গেল, যেন ওপর থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নেতা নিচের দিকে উঁকি দিলে কিছু দেখতে না পান। মিষ্টিকুমড়ার বাজার দর ২০ টাকা হবে। চাকর লোকটির হাতে ১০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে মিষ্টিকুমড়া তার হাতে তুলে নিয়ে বলল, যা যা জলদি যা, কোনো কথা কবি না, চুপচাপ চলে যা বলে তাড়িয়ে দেয়। নেতার চাকর বলে কথা, তাই ভয়ে লোকটি কিছু না বলে চলে গেল। উপরে গিয়ে চাকর নেতাকে হিসাব দিলেন, মিষ্টিকুমড়া ২০ টাকায় কেনা। এভাবে ১০ টাকা গেল চাকরের পকেটে। কিছুদিন পর সেই কৃষকের সঙ্গে নেতার দেখা হয়। নেতা ওই দিনের ঘটনা জানতে পারেন। কৃষকের কাছে তার চাকরের আচরণের জন্য ক্ষমা চান! নিজ বাড়ির চাকরের এমন আচরণে হতাশ হয়ে নেতা একান্তে বলেছিলেন, যে দেশে মিষ্টিকুমড়ার দাম নিচতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসতে আসতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা হয়ে যায়, সেই দেশের মানুষের কী হবে? দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন নেতার খুব অভাব বোধ করছি।

No comments:

Post a Comment