- রফিকুল ইসলাম সাগর
এক বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলাম হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা জিরুন্দা গ্রামে। সেখানে বন্ধুর বাড়ি। জিরুন্দা গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে বি-বাড়িয়া নামলাম। সেখান থেকে ৪০০ টাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে ফান্দাক গেলাম। যেতে যেতে রাত ৯টা বেজে গিয়েছিল। ফান্দাক থেকে রাতে হাঁটা শুরু করলাম। ফান্দাক সেই এলাকার সবচেয়ে বড় বাজার। জিরুন্দা গ্রামে গাড়ি চলাচলের জন্য কোন রাস্তা নেই তাই হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। প্রচণ্ড শীত, শীতে হেঁটে যেতে ভালোই লাগছিল। কিন্তু একটু ভয় পাচ্ছিলাম কারণ রাতের বেলা পথে মানুষের চলাচল নেই। ঝিঁ ঝিঁ পোকা আর ব্যাঙ ডাকছিল। প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার পর লক্ষ্য করলাম আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধুর দু’ভাই পথে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখে ভয় কিছুটা কমল। আরও এক কিলোমিটার হাঁটার পর বন্ধুর বাড়ি পৌঁছলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠলাম অনেক দেরি করে। প্রচণ্ড শীতে কম্বল ছেড়ে বের হতে ইচ্ছে করছিল না। কুয়াশায় মনে হচ্ছিল যেন বৃষ্টি হচ্ছে। পরে পিঠা দিয়ে সাকালের নাশতা শেষে ঘুরতে বের হলাম। লক্ষ্য করলাম, গ্রামটিতে গাড়ি চলাচলের কোন রাস্তা নেই। যে রাস্তা আছে তাতে সাইকেল ঠিকমতো চালানো যায় না। আমরা এদিক থেকে ওদিক হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ালাম। আমার জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা। মানুষের মুখে শুনতাম অজপাড়াগাঁ। এত নিভৃত অজপাড়াগাঁ প্রথম দেখলাম। সব কিছুই অন্য রকম, অন্য সব গ্রামের মতো না। যেদিক দিয়ে যাই সবাই তাকিয়ে থাকে, বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে সবাই কী যেন বলাবলি করে। এই পাঁচটি গ্রামে কোন হাইস্কুল ও কলেজ নেই, আছে একটি মাদ্রাসা ও একটি প্রাইমারি স্কুল। ৮ কিলোমিটার দূরে বামৈ একটি হাইস্কুল ও একটি কলেজ। এই গ্রামের মানুষ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের কিছুই পাওয়া যায় না। জিরুন্দা গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বামৈ আসে বাজার ও কেনাকাটা করতে এবং অন্য কোথাও যেতে হলে বামৈ থেকে গাড়িতে উঠতে হয়। বামৈ যেতে হলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেই। গ্রামটির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি তাই এত পথ হাঁটার পরও খারাপ লাগেনি। আছে কিছু পুরনো দিনের মন্দির, নদী। সব নদী এখন শুকিয়ে গেছে। জানতে পেরেছি এখানকার প্রধান সৌন্দর্য বর্ষার সময়। এই গ্রামের মানুষ খুব ভালো তারা খুব সহজ-সরল। তাদের কথাবার্তা আচার-আচরণে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তাদের ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। বাড়ি ফিরে আসার সময় চোখের কোণে জল চলে এসেছিল।


No comments:
Post a Comment