- রফিকুল ইসলাম সাগর
রাত ১২টায় বাস ছাড়বে নাটোরের উদ্দেশ্যে। একে একে সবাই এসে হাজির বনানী সবুজ সংঘ ক্লাবের সামনে। জাহাঙ্গীর আলম সবাইকে আগেই বলে দিয়েছিল অতিরিক্ত শীতের কাপড় আনতে। সবাই তাই করেছে। একে একে সবাই চলে এলে বাস ছেড়ে দিল। বাস চলা শুরু করল। বাসের মৃদু দোলানীতে কেমন জানি ঝিমঝিম এসে গেল। চোখের ঘুম তাড়াতে সবাই মিলে গান ধরল- চলো না ঘুরে আসি অজানাতে....।
খাদ্য মন্ত্রী পিংকি পড়ল বিপাকে। পিংকি বেশ মোটা তাজা বলে সবাই তাকে খাদ্যমন্ত্রী বলে ডাকে। ওকে নিয়ে গান শুরু হলো এবার। কেউ মোটা বলে ডাকছে, কেউ তার পেটে চিমটি কাটছে। এক পর্যায়ে পিংকি কেদে ফেললো। বড় ভাই আলমগীর বললো সবাইকে চুপ! এবং পিংকিকে বিরক্ত করতে সবাইকে নিষেধ করে দিলেন।
বাস চলছে..। জানালা দরজা বন্ধ। তারপরও প্রচন্ড শীত লাগছে। রাত যত গভীর হচ্ছে শীত ততো বাড়ছে। জড়োসড়ো ঝিমুতে ঝিমুতে প্রচন্ড ঠান্ডার একটা রাত পার করলাম আমরা।
নাটোরের রাজবাড়িতে যখন আমরা পৌছলাম তখন সকাল আটটা। সবার চোখ চলে গেল একটা শিব মন্দিরের দিকে। মাটির উপরে ঢালাই করা প্রায় বিশ ফিট উঁচু একটি প্ল্যাটফর্মের উপরে মন্দিরটি অবস্থিত। এখানে রয়েছে দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ পাশেই বিশাল একটা পুকুর। পুরো মন্দিরের স্থাপত্য এক কথায় অসাধারন। ভুনা খিচুরী দিয়ে সবাই সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। বাবুর্চিকে রান্না-বান্না বুঝিয়ে দিয়ে সবাই দল বেধে ঘুরে দেখতে বেড় হয়ে গেলাম। তিনটি গ্রুপ হলো। বড় গ্রুপ,মেঝো গ্রুপ ও ছোট গ্রুপ। তিন গ্রুপ গেল তিন দিকে। সবাই রাজবাড়ির দৃশ্য কেমেরাবন্দি করায় বেস্ত হয়ে পড়ল। রাজবাড়ির মোট আয়তন ১২০ একর। ছোট-বড় ৮টি ভবন আছে। আছে ২টি গভীর পুকুর ও ৫টি ছোট পুকুর আছে। রাজবাড়ি বেষ্টন করে আছে দুই স্তরের বেড় চৌকি। পুরো এলাকা ২টি অংশে বিভক্ত – ছোট তরফ ও বড় তরফ। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে সবাই ফিরে এলাম বাসের সামনে। সেরে নিলাম দুপুরের খাওয়া-দাওয়া। খাওয়ার পর কারও শরীর যেন আর চলেনা। সবাই বসে পড়লাম আড্ডায়। গান আর গল্পে জমে উঠল আড্ডা। আড্ডা শেষ করে রাজবাড়ির মেলা থেকে কেনাকাটা করতে চলে গেলাম সবাই।
রনির নির্দেশ সন্ধার মধ্যে সবাই চলে আসতে হবে আমাদের। সন্ধায় আমরা সবাই বাসে চড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সবাইকে আনন্দ দিতে সাইফুল চালকের পাশে দাড়িয়ে বললো, আমি যাকে ডাকব তাকে এখানে এসে গান গাইতে হবে। সবাই রাজি হলো। প্রথম ডাক পড়ল বড় ভাই আলমগীর। আলমগীর ভাই গান গাইতে চাইছিল না। সবার অনুরোধে সে গান গাইতে বাধ্য হলো। একে একে গান গাইল আমিনুল,জাহিদ,আরিফ,এনামুল,সাগর,আনারুল,হাবিবুল্লা,সম্মির,হালি ম,ইয়াসিন,বাবু,ইব্রাহিম। রনিকে গান গাইতে বলার পড়ে রনি গাইল- ''আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালবাসি''। পন্ডিতকে গান গাইতে ডাকার পড়ে পন্ডিত বললো, আমি গান গাইতে পারবো না, আপনারা সবাই আমাকে একশ টাকা করে দেন আমি একটা ফুটবল কিনব। এই কথা শুনে বাসে সবাই হি হি হো হো করে হেসে দিল। হই চৈ করতে করতে আমরা ঢাকায় ফিরলাম।
১৯ জানুয়ারী ২০১২ বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত

No comments:
Post a Comment