Monday, June 1, 2015

কথা বলতেও টাকা লাগে



রফিকুল ইসলাম সাগর
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। হাসপাতালে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারও সঙ্গে কথা বলতেও টাকা লাগে- এমন অভিযোগ মহাখালী থেকে আসা সোহেলের। তিনি জানালেন, তিন দিন ধরে তার মা এ হাসপাতালে ভর্তি। মাকে নিয়ে তাকে পদে পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওয়ার্ডবয়, আয়া, নার্স ও দারোয়ানসহ কর্তব্যরত প্রায় সবাই নাকি টাকা ছাড়া কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন না। তিনি বললেন, প্রয়োজনে কাউকে যদি কোনো প্রশ্ন করি, এমন এক ভাব ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, যেন তিনি কথা বলতেই জানেন না, অথবা তিনি কথাটা শোনেননি। দশবার প্রশ্ন করলে একবার উত্তর পাওয়া যায়। আর যদি পকেট থেকে দশ-বিশ টাকা হাতে তুলে দেয়া হয়, তাহলে উত্তর পাওয়া যায় সঙ্গে সঙ্গেই।  
তিনি আরও জানালেন, প্রতিদিন প্রতিবার হাসপাতালের ভেতরে মহিলা ওয়ার্ডে, যেখানে তার মা ভর্তি- সেখানে ঢুকতে গেটে একবার দারোয়ানকে টাকা দিতে হয়। আরেকবার ওয়ার্ডে ঢুকতে দারোয়ানকে টাকা দিতে হয়। নয়তো ঢুকতে দেয়া হয় না। তিনি জানান, তিন দিনে তার প্রায় দুই হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে শুধু ঘুষ দিয়ে। মহিলা ওয়ার্ডের পরিবেশ ভালো না বলে মাকে কেবিনে ভর্তি করাতে চান সোহেল। বলা হচ্ছে, কেবিন খালি নেই। তিনি অভিযোগ করলেন, আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি, তিনটি কেবিন খালি আছে।
১৮ জানুয়ারি দেখা গেল, গেটের ভেতরে ঢুকতে অনেকেই দারোয়ানের বাধা পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গেটের সামনের চিত্রটা মোটামুটি রকমের ভিড়ই বলা চলে। এরই মধ্যে একজনকে দেখে দারোয়ান সবার উদ্দেশে বলল-
: এই সরেন, সরেন। স্যার আইছে।
ভাবলাম লোকটি হয়তো হাসপাতালের বড় কোনো কর্মকর্তা। কিন্তু না, মূল কাহিনী ভিন্ন। অনুসন্ধানে জানা গেল, লোকটির এক আত্মীয় এ হাসপাতালে ভর্তি। বেশ কয়েকদিন ধরে এখানে তার আসা-যাওয়া। তিনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দারোয়ানকে বড় অংকের বকশিশ দিয়ে যান। তাই তার প্রতি দারোয়ানদের এত ভক্তি!
কেবিন খালি থাকার পরও দেয়া হয় হচ্ছে না কেন- এ প্রশ্নের উত্তরে একজন নার্স জানালেন-
: যদি উপরের লেভেলের কাউকে দিয়ে ফোন করানো যায়, তাহলেই মিলবে কেবিন।

 ঢাকা 


প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫

No comments:

Post a Comment