Tuesday, June 9, 2015

ফেইসবুকে প্রতারণা

-রফিকুল ইসলাম সাগর 

"হ্যালোআমি রোস জিনাউই। আমার বয়স ১৮ বছর। আমি তোমার প্রোফাইলটি দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছে। আমরা চাইলে খুব ভালো বন্ধু হতে পারি এবং একটা ভালো সম্পর্কে জড়াতে পারি। কিছুটা কাছাকাছি যেতে পারি। আমি তোমার সাথে ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চাই। এই যে আমার ই-মেইল। আমার আরো খোলামেলা, মোহনীয় ছবি দেখতে চাইলে মেইল করো বন্ধু। তোমার মেইলের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থেকো। ইতি তোমার নতুন বন্ধু রোস।"
ইদানিং, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ইনবক্সে অপরিচিত বিদেশী মেয়েদের এমন মেসেজ (বার্তা) আসছে নিয়মিত। এ নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। তাদের প্রোফাইল পিকচারে আকর্ষনীয় লোভনীয় ছবি দেয়া থাকে। সম্পর্ক তৈরির আকুতি জানিয়ে তাদের পাঠানো মেসেজ পেয়ে অনেক নতুন ফেসবুক ব্যবহারকারী বাংলাদেশী খুশি হয়ে যায়। নতুন প্রেমে পড়ার মতো আবেগে ভাসতে থাকে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। এ সব বিদেশী মেয়েদের পাঠানো মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে ধীরে ধীরে তাদের পাতানো ফাদে পা দেয় নতুন ও অজ্ঞ ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এবং তারপর আর্থিক ভাবে প্রতারিত হয়। 
যারা অনেক আগে থেকে ইন্টারনেট/ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের কাছে এই মেসেজ গুলো গুরুত্বহীন। তারা জানে এটা অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আধুনিক কৌশল। অনেক ছেলেরাও মেয়েদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একাউন্ট খুলে প্রতারণার ফাদ পাতে। কিন্তু অনেক ইন্টারনেট/ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফ্রেক আইডি অথবা এইসব আধুনিক প্রতারণার কৌশলের ব্যাপারে ধারণা নেই। তাদের কাছে বিদেশী মেয়ে বন্ধু বিশাল ব্যাপার। আর নিয়মিত মেসেজ আদান-প্রদান তো আরো বিশাল ব্যাপার। ছেলেরাও যে মেয়েদের ছবি দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট তৈরী করে ছেলেদের সাথে মেসেজ আদান-প্রদান করে এটা অনেকেই জানেন না। কিছু মানুষ মেয়েদের ছবি দেখলেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধুর তালিকা ভারী করে নিজেই প্রতারনার পথে পা বাড়ায়।
এ সব বিদেশী মেয়েদের সাথে নিয়মিত মেসেজ আদান-প্রদান করলে দেখা যায় তারা খোলামেলা ছবি পাঠিয়ে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে। বিশ্বাস অর্জন করে ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখিয়ে টাকা চায়। এই যেমন, ''আমার বাবা নেই। আমার কোনো ভাই নেই। আমরা খুব গরিব। এ মাসের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে আমার কলেজে টিউশন ফি দিতে হবে। না দিতে পারলে আমি পরীক্ষা দিতে পারবনা। কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই। এখন কি করব ঠিক বুঝতে পারছি না। যদি পারো এই একাউন্টে কিছু টাকা পাঠাও।'' এমন মেসেজ পেয়ে অনেকে আবেগে পড়ে টাকা পাঠিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো মেয়ে বন্ধু পরিচয় হওয়ার এক পর্যায়ে মেসেজ পাঠায়, ''আমি তোমার সাথে দেখা করতে তোমার দেশে আসব। কিন্তু আমার কাছে এই মুহুর্তে টাকা নেই। তুমি বিমান ভাড়া পাঠাও।'' টাকা পাঠানোর পর দেখা যায় সেই নারী আর যোগাযোগ করছে না। এই সব প্রতারণার ফাদে পা দেয় অসংখ্য প্রবাসী বাঙালিরা। 
মালয়েশিয়া প্রবাসী জামালপুরের সোহাগের সাথে কথা হয়। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, ফিলিপাইনের এক মেয়ে তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। মেয়েটির প্রোফাইল ঘটিয়ে সে অসংখ্য আকর্ষনীয় সুন্দর ছবি দেখতে পায় এবং ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। নিমিষেই মেয়েটিকে নিয়ে তার নানান রকম কল্পনা সৃষ্টি হতে থাকে। প্রথম দিনেই মেসেজ আদান-প্রদানে দুইজনের মধ্যে প্রেম হয়ে যায়। মেয়েটি ক্রিস্টান ধর্মের। সোহাগকে জানায় সে তাকে বিয়ে করবে এবং মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করবে। মোবাইল নাম্বার পেয়ে দু'জনের কথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে সম্পর্ক আরো গভীর হয়। প্রথম প্রথম সোহাগ মেয়েটিকে মোবাইলে টাকা পাঠায়। আস্তে আস্তে পরিবারের নানান অজুহাত দেখিয়ে দফায় দফায় টাকা আদায় করে মেয়েটি। এক পর্যায়ে মেয়েটিকে মালয়েশিয়া দেখা করতে আসার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠানোর পর মেয়েটির ফেসবুক একাউন্ট গায়েব। যে মোবাইল নাম্বারে কথা বলত সে নাম্বার বন্ধ। তখন সোহাগ বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছে। প্রায় একই ভাবে প্রতারিত হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসী টাঙ্গাইলের অভি, মিরপুরের নাজমুল ও নরসিংদীর তৌকির।

২৩ অক্টোবর ২০১৩, দৈনিক বর্তমানে প্রকাশিত 

No comments:

Post a Comment