Thursday, June 18, 2015

মিনা আপুর গল্প

রফিকুল ইসলাম সাগর 

কিছুদিন আগে মিনা নামের এক আপুর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছে। কথা বলার পর জানতে পারলাম চার বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। তার বিয়ের ব্যাপার কিছুটা নাটকীয়। ছেলের সম্পর্কে এবং ছেলের পরিবার সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনেশুনে মিনা আপার বাবা-মা তার বিয়ে দেন। বিয়ের আগে তাকে বলা হয়েছিল ছেলে উচ্চশিক্ষিত। কিন্তু বিয়ের পর তিনি জানতে পারলেন ছেলে মাত্র এইচএসসি পাস। কিছুদিন পর দেখলেন, তার স্বামী নেশা করে। প্রতিদিন নেশা করে বাড়ি ফিরে। মিনা আপু প্রতিবাদ করলে তাকে স্বামী শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। স্বামী প্রতিদিন রাত দু'টা-তিনটার দিকে বাড়ি ফিরে। একদিন স্বামী ভালো হয়ে যাবে এই চিন্তা করে মিনা আপু বাবা-মাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। যতই হোক তার স্বামী। এভাবে চার বছর পার হল। কিন্তু স্বামী এখনও ভালো হয়নি। তার স্বভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি বরং সে আপুর সঙ্গে আগের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ ব্যবহার করে। ইদানিং তার স্বামীর সঙ্গে নাকি কয়েকটা মেয়ের সম্পর্ক হয়েছে। এ কথা বলতে বলতে তিনি কেদে ফেললেন। আমাকে বললেন, 'আমার সব শেষ। এখন ওর সঙ্গে আমার সংসার করা আর সম্ভব না। ও এখন খুব ভয়ংকর হয়ে গেছে। আমাকে যে কোন সময় মেরেও ফেলতে পারে।' কথাগুলো শুনতে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল। ভাবলাম এমন ঘটনা তো আমাদের সমাজে এখন কম নয়। মিনা আপু একা নন, এভাবে হয়তো আরও অনেক আপুর জীবন নষ্ট হচ্ছে, সংসার ভাঙছে। এমনটি হচ্ছে হবে একথা ভেবে যদি আমরা বসে থাকি তাহলে তো নারী নির্যাতন চলতেই থাকবে। সমাজ একটুও বদলাবে না। তাই আজ আমাদের সব পুরুষের শপথ নেয়া উচিত, আমরা পরিবারে নারী নির্যাতন বন্ধ করব। এমন এক শপথ থেকেই তো এসিড সন্ত্রাসের বিপক্ষে প্রবল জনমত তৈরি হয়েছে। সচেতন পুরুষরা ঐক্যবদ্ধ হলে ক্ষতি কী?


২০০৯ সালে দৈনিক যুগান্তরের সুরঞ্জনা পাতায় প্রকাশিত।

No comments:

Post a Comment