-রফিকুল ইসলাম সাগর
ছোট বেলা থেকেই বাবাকে খুব ভয় পাই। শুধু আমিই না আমাদের বংশের প্রায় সবাই আমার বাবাকে ভয় পায়। কখনো কিছু প্রয়োজন হলে ভয়েতে সরাসরি বাবার কাছে চাইতাম না। মাকে দিয়ে বলিয়ে আদায় করিয়ে নিতাম। যদিও সরাসরি বাবার কাছে কিছু চাইলে কোনদিন না করেননি। তারপরেও বাবার কাছে কিছু চাইতে গেলে অন্যরকম ভয় কাজ করতো। বাবার সাথে কাটানো যেই স্মৃতি আমার সবচাইতে বেশি মনে পড়ে সেটি হলো- বাবার ফুটবল খেলা খুব পছন্দ। তখন আমি অনেক ছোট। বাবা প্রায়ই স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা দেখতে যেতেন। তখন মাঝে মাঝে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। বাবার হাত ধরে স্টেডিয়ামে যেতাম এবং পাশাপাশি বসে ফুটবল খেলা দেখতাম।
বাবার সবকিছুই আমার কাছে অন্যরকম লাগে। আশে-পাশের মানুষ গুলো ও আত্বীয় স্বজনদের আমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে বাবাকে নিয়ে খুব গর্ব হয়। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে সব মিলিয়ে বাবাই আমার নায়ক।
চোদ্দ কি পনের বছর আগে বাবা তার সব বন্ধুদের সাথে কুরবানী ঈদের আগে গরু কিনতে ভুয়াপুর গিয়েছিলেন। সাথে আমিও ছিলাম। ঢাকা থেকে দুইটি প্রাইভেট কার এবং একটি মাইক্রোবাস নিয়ে আমরা সেখানে যাই। রাতে গরু কিনে নিয়ে ঢাকা ফিরছিলাম। সব গুলো গরু একটি ট্রাক ভাড়া করে তাতে উঠানো হয়েছিল ঢাকা নিয়ে আসার জন্যে। ফেরার পথে আমরা দুর্ঘটনা কবলিত একটি প্রাইভেট কার দেখতে পাই। বাবা আমাদের মাইক্রোবাস থামাতে চালককে নির্দেশ দেন। আমরা গাড়ি থেকে নেমে দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেট কারটির সামনে গিয়ে দেখতে পাই, কারের ভেতর চালক মারাত্নক আহত অবস্থায় পরে আছে। ভেতরে আর কোনো যাত্রী ছিলনা। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই মুহুর্তে বাবার সব বন্ধুদের মধ্যে বাবা বলেছিলেন, একে ঢাকা নিয়ে যাই, হাসপাতালে ভর্তি করে দিব। পরে তাকে আমাদের মাইক্রোতে তুলে ঢাকা নিয়ে এসে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। লোকটিকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন ছিল সে সময়। তার রক্ত আমার বাবার রক্তের গ্রুপের সাথে মিলে। তারপর বাবা রক্ত দিয়ে লোকটিকে বাঁচিয়েছিলেন। এই হলো আমার বাবা সব ক্ষেত্রেই পরউপকারী। মূলত এই কারণেই বাবা আমার দৃষ্টিতে নায়ক।
আজ থেকে প্রায় তিন বছরের বেশি সময় আগে। তখন আমি মালয়েশিয়াতে থাকি। মালয়েশিয়াতে বছর বছর ভিসার মেয়াদ নবায়ন করতে হয়। আমার ভিসার মেয়াদ নবায়ন করতে পাসপোর্ট জমা দেয়ার মাত্র একদিন বাকি ছিল। এক বছর শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র সাতদিন। সেদিন পর্যন্ত আমার হাতে পুরো টাকা ছিলনা ভিসা নবায়নের জন্য টাকা জমা দেয়ার। গোটারাত ঘুম হয়নি কিভাবে কাল ভিসার টাকা জমা দিব এ চিন্তায়। কোনো উপায় না পেয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা চাইব বলে ঠিক করলাম। কিন্তু বাবাকে ফোন করে টাকা চাওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। আবার কিভাবে কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সকালে সাহস করে বাবাকে ফোন করলাম। তার সাথে প্রথমে অন্য প্রসঙ্গে কথা শুরু করি। এক পর্যায়ে তখনও আমি বাবাকে টাকার কথা বলিনি। কি অবাক করার মতো ব্যাপার বাবাই আমাকে বলে বসলেন, তোমার কি টাকা লাগবে? আমার মনে হচ্ছে তুমি সমস্যায় আছ। তোমাকে টাকা পাঠাই। আমি তো পুরো অবাক হয়ে গেলাম। চোখের কোনে পানি এসেছিল সে মূহুর্তে। বাবাকে শুধু বললাম, টাকা লাগবে। বাবা কোনো প্রশ্ন করলেন না টাকা কেন লাগবে। সাথে সাথে বললেন, টাকা কত পাঠাতে হবে? কিভাবে পাঠাব?
No comments:
Post a Comment