Sunday, June 21, 2015

গুন্ডামি

রফিকুল ইসলাম সাগর 
এলাকার অনেক সিনিয়র এক বড় ভাই। যিনি ছিলেন এক সময়কার অনেক বড় গুন্ডা। তার জীবনে বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য পুলিশের হাতে ধরা পরে জেল খেটেছেন। অসংখ্য নেতার ছত্রছায়ায় কাজ করেছেন। অনেকবার নেতা বদল হয়েছে। এক নেতার প্রয়োজন শেষে আরেক নেতার ডাক পরত। বলা চলে, নেতারা শুধু তাদের প্রয়োজনে তাকে ব্যবহার করেছেন। প্রয়োজন ফুরালে নেতার এমন ভাব তাকে চিনেনই না। এই বড় ভাইয়ের জীবনের একটি গল্প কয়েকদিন আগে শুনলাম। গল্পটি আমি সবার জন্য উপস্থাপন করলাম। 

এই গল্পটি যাকে নিয়ে তার নাম প্রকাশ করছিনা। তরুণ বয়স থেকে তিনি অপরাধ জগতের সাথে জড়িয়ে পরেন। একসময়ে এই লাইনে তার অনেক নাম ডাক হয়। তার নিজ এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলোতে তার নামে মানুষ ভয় পেতো। এলাকার অসংখ্য উঠতি ও ছোট বড় গুন্ডারা ছিল তার অনুসারী। এসব গুন্ডাদের নিয়ে ছিল তার বিশাল গ্যাং। জোর দখল, চাদাবাজি করে বেড়াতেন। তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল আতঙ্ক। অবৈধ অস্রের জোরে দাঁপিয়ে বেড়াতেন যিনি। বর্তমানে তিনি তার জীবনের শেষ বয়সে। পুলিশের কাছে ধরা পরে পরে জেল খাটতে খাটতে এবং সামাজিক দিক থেকে অতিষ্ঠ হয়ে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েছেন এ লাইন ছাড়তে। গুন্ডামি ছেড়েছেন প্রায় দশ পনের বছর আগে। বর্তমানে তার যেই অবস্থা তার পোশাক, চলাফেরা, কথাবার্তা, জীবন যাপন সব মিলিয়ে মানুষ তাকে পাগল মনে করে। তার আর্থিক অবস্থাও খুব দূর্বল। একজন অচেনা মানুষকে তাকে দেখিয়ে তার অতীতের ইতিহাস তুলে ধরলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবেন না। হাস্যকর মনে হবে। কিন্তু সে সময়কার তার রঙিন জীবন যাপন এখনকার হাস্যকর গল্প মনে হলেও ছিল বাস্তব গল্প। 

অনেক বছর আগে নির্বাচনের আগের ঘটনা। সেবার নির্বাচনে যে নেতা পাশ করেছিলেন সেই নেতার হয়ে এই গল্পের নায়ক বড় ভাই এবং তার গ্রুপের সবাই নির্বাচন পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। নেতাকে জেতাতে তারা অনেক কিছু করেছেন। সেসময়ে তাদের ভয়ে মানুষ কাপত। নির্বাচনের দিন নেতার জন্য কেন্দ্র দখল, ভোটারকে ভয় দেখানো সহ অনেক অসৎ পন্থা অবলম্বন করে তারা। তাদের দাপটে নেতা পাশ করেন। নেতা আগেই বুঝেছিল, এদের দিয়ে হবে। আর তাই নির্বাচনের আগে তাদের দেকে আপন করেনিয়েছিল। ছলে কৌশলে নেতা তাদের হাত করেছিল। তাদের জন্য নেতার মায়া দেখে তারা তো মনে করল, 'আহ! ভাই আমাদের কত ভালবাসে। এটাই আমাদের আসল ভাই! ভাইরে পাশ করাতে পারলে আমাদের একটা গতি হবে।' এসব ভাবার সময় এবং রাজপথে আমার ভাই, তোমার ভাই....স্লোগান দেয়ার সময় তারা কেউই জানত না নেতার এই মায়া পুরোটাই দেখানো। ভালবাসাতেও ছিল ভেজাল। সব আশ্বাস ছিল মিথ্যা। 

পাশ করার পরেই ধরা পড়ল নেতার অন্যরূপ। যেই নেতার জন্য তারা কাজ করেছেন নির্বাচনে পাশ করার পর সেই নেতাই থানায় একটি সন্ত্রাসীদের তালিকা দিলেন। যেই তালিকার সর্বপ্রথমেই ছিল, বড় ভাইটির নাম। তারপর একে একে গ্রুপের অন্যদের সবার নাম। নেতার কাছে কৈফত চাওয়ার সুযোগটাও পাওয়া গেল না। তার আগেই পুলিশ তাদের খুজতে শুরু করে। খবর পেয়ে যে যার মত আত্নগোপন করার চেষ্টা করে। নেতা নিজে থানায় লিস্ট দিয়েছেন এবং পুলিশের অর্ডার দিয়েছেন এদের যেভাবেই হোক ধরতেই হবে। আর তাই পুলিশের বিশেষ গুরুত্ব। ডাইরেক্ট একশন যাকে বলে আরকি। তাদের খুজতে প্রতিদিন এলাকায় পুলিশের গাড়ী। বাড়ীতে পুলিশের অভিযান শুরু হয়। অন্যত্র আত্নগোপন করেও একপর্যায়ে রক্ষা পাওয়া গেলনা। ধরা পরতেই হলো। এর মধ্যে একজন পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ড্রেনের পানি গিয়ে পরে এমন এক ডোবায় ঝাপ দিয়েও নাকি রক্ষা পাননি। পুলিশও তাকে ধরতে ডোবায় ঝাপ দিয়েছিল। 
যাকে নিয়ে গল্প তিনি ধরা পরার আগে তার এক বন্ধু ধরা পরেছিল। বন্ধুর দেয়া তথ্য সূত্রেই তিনিও ধরা পরেন। পরে সাজা হওয়াতে জেল খেটেছেন কয়েক বছর। 


No comments:

Post a Comment