Monday, June 22, 2015

মশারা সবচেয়ে ক্ষমতাশালী

  • রফিকুল ইসলাম সাগর 

এক.
ভারতীয় টিভি চ্যানেল গুলোতে মশা মারার কয়েলের নতুন একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে দেখানো হয়- পুলিশের ডিয়াইজির ছেলে বাবাকে প্রশ্ন করে, বাবা তুমি তো অনেক বড় পুলিশ অফিসার। তোমাকে সবাই খুব ভয় পায় তাইনা? ছেলের এমন প্রশ্নে ডিয়াইজি বাবার ভাব বেড়ে যায়। সীনা ফুলিয়ে ছেলেকে উত্তর দেন, হ্যা! হ্যা! তোর বাবাকে বড় বড় সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাতরা খুব ভয় পায়। আরো বলেন, তোর বাবার যে এলাকায় পোস্টিং হয় বড় বড় সন্ত্রাসীরা তোর বাবার ভয়ে সেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাবার এসব কথা শুনে ছেলে বলে উঠে, সবাই তোমাকে এতো ভয় পায়। কিন্তু সামান্য ক্ষুদ্র মশারা তোমাকে ভয় পায়না! ছেলের এমন জবাবে ডিয়াইজি বাবা লজ্জা পেয়ে যান। আর তখন মা মশা মারার কয়েল জ্বালাতেই মশারা পালিয়ে যায়।

দুই.
মশারা অতি ক্ষুদ্র হলেও তাদের ক্ষমতা সবার উর্ধে। মশার কামড়ের ভয়ে আমরা এতো বড় বড় মানুষরা লুকিয়ে থাকি মশারির ভেতরে। এই মশারির ভেতরে যদি কোনভাবে একটি দু'টি মশা ঢুকে যায় তাহলেই হলো। শিল্পীদের গান শুনি আমরা টাকা খরচ করে। অথচ মশারা আমাদের মাগনা মাগনা গান শুনালেও সেই গান আমাদের পছন্দ না। এখন এমন এক জামানা এসেছে যে কম দামী কয়েলে মশা মরেনা। মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকের মনে প্রশ্নের ঝড় উঠে যায়, মশা যে ক্যান সৃষ্টি হইল! মশা না সৃষ্টি হইলেই ভালো হইতো। তবে আমার প্রশ্ন, মশা না সৃষ্টি হইলে কি আসলেই ভালো হইতো? মশা না থাকলে কয়েল ও এরোসল কোম্পানির মালিকরা কি করত? টিভি চ্যানেল গুলোতে মশার কয়েল ও এরোসলের হাস্যকর বিজ্ঞাপন থেকে পাওয়া বিনোদন থেকে আমরা বঞ্চিত হতাম। মশা আছে বলে নেতারাও নির্বাচনে পাশ করে। বলা যায় নির্বাচনের আগে মশা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। নির্বাচনের আগে নেতারা জনগনদের প্রতিশ্রুতি দেন, এলাকার সব মশা দমন করা হবে। আর সেই প্রতিশ্রুতিতে খুশি হয়ে জনগণও খুশি মনে ভোট দিতে যান। একবারও এটা চিন্তা করেন না যে, নেতা নিজের ঘরের মশাই তাড়াতে পারেননা, এলাকার মশা তাড়াবেন কিভাবে।

তিন.
পাড়ার এক চাচার বাসায় গেলাম তাকে খুজতে। সাথে আমার এক বন্ধু। দরজার বাইরে দাড়িয়ে আওয়াজ দিলাম, কাকা...। কোনো সাড়া না পেয়ে পাশ থেকে বন্ধু বলল, কাকায় মনে হয় বাসায় নাই। কাকা ঘরে থাকলে হুশশ হুশশ.... করার শব্দ শুনতে পাওয়া যেত। আমারও তাই মনে হলো কাকা বাসায় নেই। কাকা ঘরে থাকলে খেয়াল করেছি একটু পর পর ঠাস ঠুস থাপ্পড় দেন মশা তাড়াতে। সাথে মশা তাড়াতে হুশশ হুশশ করেন। তাকে যেন মশারা একটু বেশি-ই কামড়ায়। তার ঘরে তিন-চারটা কয়েল একসাথে জালালেও একটু পর পর ঠাস ঠুস মশা মারেন। একটুপর চাচী দরজা খুললেন। বললেন চাচা দোকানে গেছে, এখনই এসে পরবে। ঘরে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতেই কয়েল হাতে কাকা ফিরল। কাকা কই গেছিলেন? প্রশ্ন করলাম। অনেক মশা বাবা! কয়েল আনতে গেছিলাম। মশার জ্বালায় বইতে পারতাছিলাম না। কথাগুলো চাচা উত্তর দিলেন। এবার দুটি কয়েল একসাথে জ্বালিয়ে চাচা বসলেন। বসে পায়ের পাতায় ব্যান্ডিজের মতো কাপড় প্যাচাতে শুরু করলেন। আমি কিছু না বলে তাকিয়ে রইলাম। তিনি আমার দিক তাকিয়ে বললেন, 'অনেক মশা বাবা। খালি কামড়ায়। এর লাইগা পাও ঢাইকা রাখতাছি।' চাচার এমন চিত্র নিয়ে যদি কোনো বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মান করা হয় তাহলে নিশ্চিত সেই বিজ্ঞাপন চিত্র হিট। 

চার.
অন্যদিকে এক সন্ধায় পাড়ায় ঘনিষ্ট এক বন্ধুর সাথে তার এক বড় ভাই আমাদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডায় যোগ দিল। এক মুহুর্তে খেয়াল করলাম তিন-চারটি মশা একসাথে ভাইটির হাতে বসে আরামসে রক্ত খাচ্ছে। কিন্তু তার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। আমি মশা মারতে তার হাতে দিলাম থাপ্পড়। মশা মরল। রক্তে হাত মাখামাখি অবস্থা। বললাম, ভাই মশা বসছিল। দেখেন কতগুলা রক্ত খাইছে। তিনি আমার দিকে ফিরে উত্তর দিলেন, 'দুররর ভাই মশা গুলা মারলেন ক্যান? খায়তাছিল খাইত। কত আর খাইত? আপনে খাবার খাননা? মশাগো কি দোষ ওগো খাবারই তো রক্ত। এতটুকু রক্ত খাইলে আপনার শরীরের রক্ত কমব? মশা মারলে গুনাহ হয়। মশা মারবেন না।' তার এরকম কথাবর্তা শুইনা মনে হইল আমি কত বড় ভুল করে ফেললাম। থাক ভাই ভুল হইয়া গেছে। আর মশা মারমু না বলে কোনরকমের রেহাই পাইলাম।


মাসিক 'কিশোর ভুবন' এর মধুমাস, জুন ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত

No comments:

Post a Comment